ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের শিক্ষার্থী, সজীব হাসান, পারিবারিক কলহ ও যৌতুক দাবির অভিযোগে স্ত্রী মাসুদা ইসলাম তৃষা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুকবিরোধী মামলা করেছেন।
এরপর, তার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে — বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি।
সজীবের বাড়ি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায়। গত ১৬ জানুয়ারি, প্রেমের সম্পর্ক থেকে — একই উপজেলার মো. আজহারুল ইসলামের মেয়ে, মাসুদা ইসলাম তৃষাকে তিনি বিয়ে করেন। তৃষা বর্তমানে খুলনা বিএল কলেজের ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই, শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। এর জেরে, সজীব চারটি মামলা দায়ের করেন স্ত্রীর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে — যার মধ্যে তিনটি যশোরে, একটি কুষ্টিয়া কোর্টে।
যশোরে করা মামলাগুলো হলো — ২০১৮ সালের যৌতুকবিরোধী আইনের ৩ ধারা (মামলা নং ৩৭৬/২৫), দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার মামলা (মামলা নং ৩৬/২৫), ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারা (মামলা নং ৩৪২/২৫)। আর কুষ্টিয়ায় করা মামলাটি হলো — ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭, ১১৭(গ), ১১৮ ধারায় হুমকি ও ভয়ভীতির অভিযোগে।
যৌতুক মামলার এজাহার অনুযায়ী, শরিয়ত মোতাবেক ২ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে, রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী সংসার করতে থাকেন। কিন্তু, গত ২০ ফেব্রুয়ারি — স্ত্রী একটি সোনার নেকলেস ও একটি চুড়ি দাবি করেন। যার ওজন আনুমানিক ৪ ভরি — বাজারমূল্য প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সজীব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় এবং কোনো স্থায়ী উপার্জন না থাকায় — এই দাবি পূরণ করতে অক্ষম ছিলেন।
এরপর, গত ২০ মে — স্ত্রী তার অজান্তেই বাবার বাড়ি চলে যান। পরবর্তীতে, শ্বশুরবাড়িতে ডেকে এনে সজীবকে হুমকি দেওয়া হয় — বলা হয়, যদি ৪ ভরি স্বর্ণ না দেওয়া হয়, তবে স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হবে।
যৌতুক দিতে অস্বীকার করায়, ২১ মে সকালে — শ্বশুরবাড়ি থেকে সজীবকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর, ২৯ মে — স্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা ও দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার মামলা দায়ের করেন সজীব।
এর মধ্যে, ২৩ মে — স্ত্রী মাসুদা ইসলাম তৃষা, “মানসিক অশান্তি, চরিত্রহীনতা এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিয়ে” অভিযোগে স্বামীকে তালাকনামা পাঠান।
অন্যদিকে, সজীব দাবি করেন — স্ত্রীকে জোর করে পিতার বাড়িতে রেখে তাকে (সজীবকে) বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। পাল্টা মামলা হিসেবে — স্ত্রীর পরিবারও সজীবের বিরুদ্ধে “জোরপূর্বক অপহরণ” মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে।
সজীবের আইনজীবী, অ্যাডভোকেট রাজু আহমেদ বলেন, “ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করায় জটিলতা বেশি হচ্ছে। স্ত্রী আপাতত পিতার বাড়িতে আছে। আমরা দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধার মামলা করেছি, যা এখন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।”
এদিকে, শনিবার — সজীব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনপত্রে তিনি জানান, “আমি যশোরের আদালতে মামলা দায়ের করার পর থেকে — বিবাদীরা আমাকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি ও ক্ষতির ভয় দেখিয়ে আসছে। ফলে আমি ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-৪৪৯) করেছি।”
তিনি অভিযোগ করেন — “যশোর থেকে কিছু লোক এসে, আমাকে কুষ্টিয়ায় মামলা প্রত্যাহার করতে চাপ দেয়। আমাকে চড়-থাপ্পড়ও মারে। এরপর, আমি কুষ্টিয়ার আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করি।”
তিনি আরও বলেন, “৩ জুলাই, মামলার শুনানিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে কোর্টে গিয়ে ফেরার সময় — কুষ্টিয়ার মজমপুর এলাকায় বিবাদীপক্ষের ১০–১৫ জন অস্ত্র নিয়ে আমাকে ঘিরে ধরে। আমাকে গালিগালাজ করে ও মামলায় আপস করতে হুমকি দেয়। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০–২৫ জন শিক্ষার্থী আমাকে উদ্ধার করেন।”
তিনি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ও ক্যাম্পাসে থাকার অনুমতির আবেদন করেন।
সজীব বলেন, “শরিয়াহ অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে। ভরণপোষণও দিয়েছি। সংসার ভাঙার এখতিয়ার তার পরিবারের নেই। স্ত্রীকে আমি বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “তৃষার পরিবারের পক্ষ থেকে তালাকনামা পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে না হলেও, ক্যাম্পাসের ১৭৫ একরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের, তা পালন করবো।”
স্ত্রীর পরিবারের বক্তব্য, “যৌতুকের কোনো প্রসঙ্গে আমাদের কিছু জানা নেই। তৃষা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে করেছে। এখন সংসার করার মতো পরিবেশ না থাকায় তালাকনামা পাঠানো হয়েছে। আমাদের পরিবার সরকারি চাকরিজীবীদের — কোনো হয়রানি বা অপপ্রচার সহ্য করবো না।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে চলছে আলোচনার ঝড়। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সমস্যা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে।