ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২তম দিনের আলোচনা
ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২তম দিনের আলোচনা

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে লাগবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন : অধ্যাপক আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্য কমিশনের ১২তম দিনের আলোচনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)-এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিষয়গুলো হল, অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে৷ জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে৷
তিনি আরো জানান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া, জরুরি অবস্থা চলাকালীন অনুচ্ছেদ ৪৭(ক)-এর বিধানসাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার (Right to life) এবং বিচার ও দন্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাবে না।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাইয়ের আলোচনায় বিদ্যমান সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সবকটি রাজনৈতিক দল এবং জোট একমত হয়েছিলো।

আরও পড়ুনচিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে দ্রুতই চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আজ রোববার (১২ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা জানান। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দল এবং জোটসমূহ আজ প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৫-এ সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। এক্ষেত্রে যা যুক্ত করতে হবে, রাষ্ট্রপতি আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন। কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তবে তারা সংবিধানে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুইজন বিচারপতির মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন—এমন বিধান সংযোজন করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের অভিযোগের কারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করা যাবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন হতে আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।