ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। আসামিপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ।
অভিযোগ গঠনের সময় চারজন আসামি—ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম—ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।
বাকি চার আসামি—সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল—পলাতক রয়েছেন।
গত ৩ জুন পলাতক চার আসামিকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। তবে তারা উপস্থিত না হওয়ায় সোমবার তাদের অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠন করা হয়।
আরও পড়ুন : সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতির বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর আসামিরা সরাসরি গুলি চালান।
এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ছয় মাস ১৩ দিন তদন্ত শেষে গত ২৫ মে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে ৯০ পৃষ্ঠার বিশ্লেষণ, ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিও, ১১টি পত্রিকা প্রতিবেদন, ২টি অডিও এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পর ২৫ মে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেয়। এরপর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের একটি অংশের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে।
দেশজুড়ে গুম, খুন ও নির্বিচার হত্যা নিয়ে তখন ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এই মামলাটি সেই ধারাবাহিকতায় অন্যতম আলোচিত একটি ঘটনা।