বিচারকের সামনেই যৌতুক মামলার আসামির কিল-ঘুসিতে আহত ২ পুলিশ
জেলা জজ আদালত, মেহেরপুর

মামলা নিষ্পত্তিতে মেহেরপুর সিজেএম আদালতের রেকর্ড

মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের চৌকাঠ পেরিয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতেই বিচারপ্রার্থীদের ভিড় চোখে পড়বে। বিশেষ করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলীর আদালতের সামনের করিডোরে যেন জনস্রোত। সাধারণত বড় কোনো মামলার রায়ের দিন এমন ভিড় দেখা যায়।

তবে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ জানতে চাইলে পঞ্চাশোর্ধ্ব আমিনা হালসোনা নামের এক নারী জানান, দশ বছর ধরে তিনি সাক্ষী দিচ্ছেন, কিন্তু মামলার সুরাহা হয়নি। এবার তিনজন সাক্ষী নিয়ে এসেছেন, শুনেছেন আজ সবাইকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছে। তিনি আশাবাদী, এবার তার মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হবে।

আদালতের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। দরজার সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, আজ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারি মামলার বহু সাক্ষী হাজির হয়েছেন।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাজাহান আলীর আদালতে দিনভর চলছিল সাক্ষ্যগ্রহণের এই ধারাবাহিকতা। আদালত চত্বরে আইনজীবীদের ব্যস্ততাও ছিল চোখে পড়ার মতো। এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে দৌড়ঝাঁপ চললেও অধিকাংশের গন্তব্যই ছিল এই আদালত।

আইনজীবী আল মামুন অনল বলেন, চীফ স্যার সাক্ষ্য গ্রহণে অত্যন্ত আন্তরিক। বিচারপ্রার্থীরা কষ্ট করে সাক্ষী হাজির করেন, তাদের যেন বারবার ঘুরতে না হয়, সে বিষয়ে তিনি সচেতন। যত সাক্ষী আসুক না কেন, যত রাতই হোক, স্যার প্রতিদিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেই আদালত মুলতবি করেন। এই মানবিকতা ও দায়বদ্ধতার কারণে মামলার জট দ্রুত কমছে।

আরও পড়ুনআপোষ-মীমাংসায় কক্সবাজার লিগ্যাল এইড অফিসের রেকর্ড

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মোঃ মেহেদি হাসান জানান, গেল পাঁচ মাসে এই আদালতে ২৩২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যা মেহেরপুরের বিচার ইতিহাসে রেকর্ড। গত বছর এই সময়কালে মামলার নিষ্পত্তি ছিল মাত্র ৬১টি। একই সময়ে তিনি ৪৪৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতের বারান্দায় ঘুরেছেন। অবশেষে আজ সাক্ষ্য দিতে পেরে তিনি খুশি। তার মতে, এভাবে নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ হলে বিচার বিলম্ব কমবে এবং মানুষ দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে।

জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক আসাদুল আযম খোকন বলেন, মাত্র পাঁচ মাসে ২৩২টি মামলা নিষ্পত্তি এই জেলার ইতিহাসে নজিরবিহীন। আগে এই পরিমাণ মামলা এত স্বল্প সময়ে নিষ্পত্তির কোনো নজির ছিল না। এখন আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মারুফ আহমেদ বিজন বলেন, প্রতিদিন আদালতে সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে মুখ্য আদালতে। চাপ থাকলেও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আইনজীবীরা সহযোগিতা করছেন। এই সাফল্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি সাইদুর রাজ্জাক বলেন, মাত্র পাঁচ মাস আগে নতুন চীফ বিচারক শাজাহান আলী দায়িত্ব নিয়েছেন। আগে সাক্ষীদের ডাকা হলেও সাক্ষ্য গ্রহণে অনীহা ছিল। এখন সবাই সমন পাঠাচ্ছেন, সাক্ষ্য নিচ্ছেন। বিচারক, পেশকার, সরকারি কুশলী সবার আন্তরিকতায় এই সাফল্য এসেছে।

জনগণের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, সাক্ষী দিতে এসে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। সেই বাস্তবতায় মেহেরপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠছে।