পারিবারিক বিরোধের দ্রুত ও সহজ বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের পারিবারিক আদালতগুলোতে বর্তমানে ৭৪ হাজার ২৫৯টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় রয়েছে ৫ হাজার ৩৪টি মামলা। এই দীর্ঘসূত্রতা হাজারো পরিবারকে আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর।
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘যথাসময়ে বিচার নিশ্চিত করতে পারিবারিক আদালতের পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসন’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় এই তথ্য উঠে আসে। কর্মশালার আয়োজন করে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা (সেলপ) কর্মসূচি।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, “২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ২৫৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩৪টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তবে ইতিবাচক দিক হলো, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১০ হাজার ৮৯টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিচারপ্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত অদক্ষতা দূর করতে দেওয়ানি কার্যবিধির সাম্প্রতিক সংশোধনের মাধ্যমে মামলা পরিচালনার স্তর কমানো হয়েছে। এতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ও জটিলতা হ্রাস পাবে।”
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন ছাড়া কোনো বিচার ব্যবস্থা তার কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা করতে পারে না। বিচার বিভাগের কাঠামোগত স্বাধীনতা ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত।”
আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, “এই কর্মশালা সময়োপযোগী। এতে বিচার বিভাগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারকে স্পষ্ট করেছে।”
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ন্যায্যতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। ব্র্যাক সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে।”
ব্র্যাকের সেলপ ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, “আমরা কেবল আদালতের জটিলতা দূর করতে নয়, বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতেও কাজ করছি।”
কর্মশালায় বিচারক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, নীতিনির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। তারা পদ্ধতিগত জটিলতা কমিয়ে সহজ বিচার প্রক্রিয়া চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।