হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলেন কানু মিয়া
হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলেন কানু মিয়া । আজ মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান পর

বিনা বিচারে ৩০ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন কানু মিয়া

কোনো ধরনের সাজা ছাড়াই ৩০ বছর ধরে হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলেন কানু মিয়া। বয়স এখন ৫০। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। কিন্তু মামলার কার্যক্রম দুই দশক আগে স্থগিত হলেও তার মুক্তি হয়নি।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান কানু মিয়া। সম্প্রতি কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি নজরে আনেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন। পরে তাঁর সহায়তায় ও আদালতের নির্দেশে এই মুক্তি সম্ভব হয়।

কানু মিয়া জেলার লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামের বাসিন্দা। আজ দুপুরে তাঁকে কারাগার থেকে নিতে আসেন বড় দুই ভাই। কানু মিয়া কোনো কথা বলেননি।

স্বজন, কারাগার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৫ মে কানু মিয়া ঘরে থাকা কোদাল দিয়ে তার মাকে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মা মারা যান। গ্রামবাসী কানু মিয়াকে আটক করে পুলিশের কাছে দেন। এরপর কানু মিয়ার ভাই বাদী হয়ে মামলা করেন।

মামলা চলাকালে কানু মিয়া আরও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০০৩ সালের দিকে আদালত আদেশ দেন—তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। কিন্তু সেই থেকে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শুরুতে ভাই ও স্বজনেরা কারাগারে দেখতে গেলেও পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তাঁদের ধারণা হয়েছিল, হয়তো কানু মিয়া মারা গেছেন।

সম্প্রতি জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা আব্বাছ উদ্দিন কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মাকে হত্যার অভিযোগে আটক কানু মিয়ার মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত। বাদী বা মামলার কোনো কার্যক্রমও নেই।

আরও পড়ুনবিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালতে কিল-ঘুষি, ডিম নিক্ষেপ

এরপর লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে কানু মিয়ার ভাই নাসু মিয়ার খোঁজ পাওয়া যায়। সব বিস্তারিত জেনে লিগ্যাল এইড থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কানু মিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম জামিন মঞ্জুর করেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কানু মিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পান। তখন তাঁর পরনে ছিল গোলাপি রঙের নতুন পাঞ্জাবি, সাদা টুপি ও একটি প্যান্ট। কারাগারের ফটক দিয়ে বের হলেও কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

ভাইকে পেয়ে বড় দুই ভাই মামলার বাদী মুনু মিয়া ও নাসু মিয়া তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু কানু মিয়া ছিলেন নির্বাক।

নাসু মিয়া বলেন, “আমরা ধরে নিয়েছিলাম ভাই আর বেঁচে নেই। যে কারণে যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজ ৩০ বছর পর ভাইকে পেয়ে আমরা খুশি। আজই আমরা বাড়িতে নিয়ে যাব।”

জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী মরলী ধর বলেন, “এটি অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। বিচার ছাড়াই একজন মানুষকে ৩০ বছর কারাগারে থাকতে হলো। অথচ কারও নজরে এল না। লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার নজরে আসায় এই অসহায় মানুষটির মুক্তি হলো। এই ৩০ বছর কে ফিরিয়ে দেবে?”

হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার মো. মনির চৌধুরী জানান, কানু মিয়া ৩০ বছর ২ মাস ১৬ দিন পর আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা আগেও কয়েকবার আদালতের নজরে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে এবার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে বিষয়টি কার্যকর হয়েছে।

তিনি বলেন, “কানু মিয়া খুব কম কথা বলেন। আজও ছাড়ার সময় কথা বলেননি। তবে পরিবারের কাছে ফিরে গেলে হয়তো তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।”