২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে নির্দিষ্ট ৩৯টি সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, করদাতার সংখ্যা বাড়ানো ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
এনবিআর জানায়, যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবা দেবে, তারা আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র ছাড়া কোনো সেবা দিতে পারবে না। যদি কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করে সেবা দেয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে কিছু সেবার ক্ষেত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক থাকলেও এবার নতুন করে তালিকা পর্যালোচনা করে ১৩টি সেবা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ৩৯টি সেবায় রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যে ৩৯টি সেবা পেতে রিটার্নের প্রমাণ লাগবে
১. ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ
২. কোম্পানির পরিচালক/স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হওয়া
৩. আমদানি–রপ্তানি সনদ গ্রহণ/নবায়ন
৪. ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন
৫. সাধারণ বিমার সার্ভেয়ার লাইসেন্স নবায়ন
৬. জমি বা সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর
৭. বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নবায়ন
৮. বিবাহ নিবন্ধন লাইসেন্স গ্রহণ/নবায়ন
৯. ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যপদ
১০. দলিল লেখক বা ভেন্ডার লাইসেন্স
১১. ড্রাগ, ফায়ার, পরিবেশ, বিএসটিআই লাইসেন্স
১২. বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্যাস সংযোগ
১৩. আবাসিক গ্যাস সংযোগ
১৪. বিদ্যুৎ সংযোগ
১৫. ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট
১৬. ইটভাটার লাইসেন্স
১৭. ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি
১৮. কোম্পানির এজেন্সি/ডিস্ট্রিবিউটরশিপ
১৯. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স
২০. আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা
২১. ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত
২২. ১০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র
আরও পড়ুন : রিটার্ন দিলেও কর দেন না ৩০ লাখ করদাতা
২৩. জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণ
২৪. প্রশাসনিক/ব্যবস্থাপনা পদে বেতন গ্রহণ
২৫. দশম গ্রেড বা তার উপরে সরকারি চাকরি
২৬. মোবাইল ব্যাংকিং কমিশন গ্রহণ
২৭. কনসালটেন্সি বা ক্যাটারিং সার্ভিস গ্রহণ
২৮. বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট২৯. বড় মোটরযান নিবন্ধন বা মালিকানা পরিবর্তন
৩০. এনজিওর বিদেশি অনুদান ছাড়
৩১. ই-কমার্স লাইসেন্স নবায়ন
৩২. ক্লাবের সদস্যপদ
৩৩. সরকারি দরপত্রে অংশগ্রহণ
৩৪. পণ্য আমদানি বা রপ্তানি
৩৫. রাজউকসহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নকশা অনুমোদন
৩৬. বাড়ি ভাড়া বা লিজ প্রদান
৩৭. নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পণ্য বা সেবা সরবরাহ
৩৮. হোটেল, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টারের লাইসেন্স
৩৯. সামাজিক বা করপোরেট অনুষ্ঠানে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া
এনবিআর বলছে, এই বাধ্যবাধকতা যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে, শুধু তাদের জন্য। যাদের আয় করসীমার নিচে, তারা শূন্য রিটার্ন দিলেও এই সেবা নিতে পারবেন।
রিটার্ন ছাড়াই পাওয়া যাবে ১৩টি সেবা
চলতি অর্থবছর (২০২৫-২৬) থেকে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি সেবা নিতে আর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৩টি সেবার ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে। এত দিন আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখিয়ে এসব সেবা নিতে হতো।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘অর্থ অধ্যাদেশ-২০২৫’ এ যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এই ১৩টি সেবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যে ১৩টি সেবা রিটার্ন ছাড়াই নেওয়া যাবে- তা হলো:
১. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা।
২. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মেয়াদি আমানত (এফডিআর) খোলা ও বহাল রাখা।
৩. যেকোনো ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়ন।
৪. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ।
৫. সমবায় সমিতি নিবন্ধন।
৬. সাধারণ বিমা কোম্পানির তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হিসেবে নতুন লাইসেন্স গ্রহণ।
৭. স্বীকৃত পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ (যেমন- চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি ও সার্ভেয়ার)।
৮. পাঁচ লাখ টাকার বেশি পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলা।
৯. এমপিওভুক্ত দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সরকারি অর্থপ্রাপ্তি।
১০. মোবাইল ব্যাংকিং বা ই-উপায়ে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য আর্থিক সুবিধা গ্রহণ।
১১. স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তি।
১২. ত্রিচক্র মোটরযানের (অটোরিকশা) নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন।
১৩. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ।