চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মুন্সিগঞ্জ
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মুন্সিগঞ্জ

আদালত চত্বরে আসামিকে মারধর, বাদীপক্ষের ১২ জনকে চার ঘণ্টার সাজা

মুন্সিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের হেফাজতে থাকা হত্যা মামলার আসামি মো. সুমনকে (৫০) প্রকাশ্যে মারধর করেছেন মামলার বাদী পক্ষের লোকজন। এই ঘটনায় আদালত ১২ জনকে আটক করে আদালতের ডকে ৪ ঘণ্টার জন্য আটক রাখার নির্দেশ দেন।

ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। মুন্সিগঞ্জ জেলা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ৮ম তলার বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।

কি হয়েছিল?

সোমবার রিকাবি বাজার এলাকার শ্রাবন্তী হত্যা মামলায় আসামি মো. সুমনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারকার্য শেষে সুমনকে কোর্ট হাজতে নেয়ার সময় বাদী পক্ষের লোকজন পুলিশের সামনে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। পুলিশ কনস্টেবল আবু তাহের রোবেল ও সুমন খানের সামনেই এই মারধরের ঘটনা ঘটে।

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বাদী পক্ষের আত্মীয়-স্বজনেরা সুমনকে মারধর করেন। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন আকলিমা (৬০), শফিজল ইসলাম (৩০), মফিজুল ইসলাম (৩৮), ও মাসুদ রানা (৪৯)।

আদালতের ব্যবস্থা

ঘটনার পরপরই কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুল ইসলাম মিঞা বিষয়টি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেনের কাছে উপস্থাপন করেন। শুনানিকালে অভিযুক্ত ৪ জন আদালতের কাছে তাদের ভুল স্বীকার করেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চান।

বিচারকের প্রশ্নে অভিযুক্তরা জানান, তাদের সঙ্গেই আরও যারা ছিলেন তারা হলেন— আল আমিন (৩২), বর্ষা আক্তার (২৭), মুক্তা বেগম (২৫), বীথি আক্তার (২৭), হেলেনা বেগম (৬১), শাহিন (৫৫), শাহাদাত হোসেন পাপ্পু (৩২) ও রাসেল (৩৩)।

সবাই আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা চান ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না করার অঙ্গীকার করেন।

আদালতের আদেশ

বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেন মানবিক বিবেচনায় অভিযুক্তদের ডকে (আদালতের নির্ধারিত স্থানে) ৪ ঘণ্টার জন্য আটক রাখার আদেশ দেন। পরে তারা সৎ ব্যবহারের মুচলেকা দিলে আদালত তাদের মুক্তি দেন।

এ বিষয়ে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম মিঞা জানান,

ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ২৫ ধারার বিধান মতে আদালত (জাস্টিস অফ পিস) এর ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদালতের ডকেটে ৪ ঘণ্টার জন্য অভিযুক্তদের আটক রাখার আদেশ দেন। পরে অভিযুক্তরা সৎ ব্যবহারের মুচলেকা দাখিল করায় আদালত তাদের মুক্তি দেন।

কি কারণে এমন ঘটনা ঘটলো?

হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আরিফ আহম্মেদ বলেন,

মামলার বাদীর মেয়ে শ্রাবন্তীকে কুপিয়ে হত্যা করায় আজ আদালতে আসামিকে দেখে তারা সহ্য করতে না পেরে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এজন্য অভিযুক্তরা প্রকাশ্য আদালতে ক্ষমা চেয়েছে। আদালত তাদের ৪ ঘণ্টা ডকে আটক রেখে মুচলেকার মাধ্যমে মুক্তি দেন।

প্রসঙ্গত, গেল ২০ মে সদর উপজেলার রিকাবি বাজার এলাকায় মিতু আক্তার শ্রাবন্তীকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করায় তার স্বামী মো. সুমনকে আটক করে পুলিশ। পরে আসামি সুমন আদালতে হত্যার বিষয়ে দোষ স্বীকার করেন। হত্যা মামলায় সোমবার আসামিকে বিচারকার্য শেষে পুলিশ হেফাজত নেওয়ার সময় অভিযুক্তরা সুমনকে মারধর করে।