বাংলাদেশের বিচার বিভাগে প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের তদবিরনির্ভর ও সুপারিশনির্ভর পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে এবার স্বচ্ছতা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগের এই নতুন অধ্যায় সূচিত হলো।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে এই ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৫৩ জন আইনজীবী। ভাইভা গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল।
স্বচ্ছ নিয়োগের নতুন পথচলা
পূর্বে বিচারপতি নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত তদবিরের অভিযোগ থাকলেও এবারই প্রথম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গত ২৮ মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পর ৩০০টির বেশি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে কাউন্সিল ৫৩ জনকে ভাইভার জন্য মনোনীত করে।
এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর আলোকে। ২১ জানুয়ারি গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এই প্রথমবারের মতো ভাইভা নিয়েছে বিচারপতি পদের জন্য।
কাউন্সিলের গঠন
সাত সদস্যের এই কাউন্সিলের পাঁচজন সদস্য পদাধিকারবলে মনোনীত। তাঁরা হলেন:
-
প্রধান বিচারপতি (চেয়ারপারসন)
-
আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি
-
হাইকোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি (বিচারকর্ম বিভাগ হতে নিযুক্ত নয়)
-
বিচারকর্ম বিভাগ হতে নিযুক্ত হাইকোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি
-
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল
অতিরিক্ত দুই সদস্য হিসেবে রয়েছেন:
-
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তারিক উল হাকিম
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের
বিচার বিভাগে কাঠামোগত সংস্কার
গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের বিচার বিভাগে সংস্কারের রূপরেখা প্রকাশ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। তখনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে নতুন আইন ও কাঠামো গঠনের। এরপর সুপ্রিম কোর্টের গবেষণা ও প্রস্তাবনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির আদেশে ২০২৫ সালের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এবারের ভাইভা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সেই সংস্কারেরই বাস্তবায়ন। যদিও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটি প্রথম নিয়োগ, তবে সম্প্রতি আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আছাদুজ্জামানকেও এই কাউন্সিলের সুপারিশেই নিয়োগ দেওয়া হয়।