বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ করা হলেও দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান নেই। এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধকারী কোনো কার্যকর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম-ও নেই। প্রশিক্ষণ বিমানসমূহও বেশিরভাগই অনেক পুরনো, যা নিয়মিত দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জনস্বার্থে একটি আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান এ নোটিশটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান বাহিনীর প্রধান ও রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর রেজিস্ট্রি ডাক ও ইমেইলের মাধ্যমে পাঠান।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে রাজধানী ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি পুরনো প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বহু ছাত্রছাত্রী প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে গুরুতর আহত হন। ঘটনাটি জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে এবং বিমান বাহিনীর সামরিক সক্ষমতা, প্রশিক্ষণ পরিবেশ ও অবকাঠামোগত পরিকল্পনার গুরুতর ত্রুটি তুলে ধরেছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল যে, কোনো বৈদেশিক শত্রুপক্ষ চাইলে সহজেই বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে এবং বাংলাদেশ তা প্রতিহত করতে পারবে না। দেশটিতে আন্তর্জাতিক মানের মিসাইল ইন্টারসেপ্টর, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম প্রযুক্তি পর্যন্ত নেই। এটি সরাসরি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার জন্য হুমকি।
বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানসমূহ ৩০-৪০ বছরের পুরনো, যা বারবার দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এইসব বিমান আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। ফলে পাইলট এবং সাধারণ জনগণের জীবনের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছরে একাধিক প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
আরও পড়ুন : আইডি কার্ডে অভিভাবকের ফোন নম্বর ও শিক্ষার্থীর ব্লাড গ্রুপ যুক্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
নোটিশে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের মিলিটারি এয়ারবেস সংলগ্ন এলাকায় বহু অবৈধ ও উচ্চ ভবন নির্মিত হয়েছে, যা একদিকে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে, অপরদিকে বিমান চলাচল ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এগুলো শহর পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও যায় এবং দেশের সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি।
এই প্রেক্ষাপটে, আইনি নোটিশে ৫টি মূল দাবি উত্থাপন করা হয়েছে:
১. বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য অবিলম্বে সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান ও মাল্টিরোল ফাইটার জেট ক্রয় করতে হবে।
২. দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম স্থাপন করতে হবে, যার মধ্যে থাকবে রাডার, মিসাইল ইন্টারসেপ্টর, অ্যান্টি-ড্রোন ইউনিট প্রভৃতি।
৩. পুরনো সব প্রশিক্ষণ বিমান অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নতুন ও নিরাপদ প্রশিক্ষণ বিমান চালু করতে হবে।
৪. মাইলস্টোন কলেজ দুর্ঘটনার বিষয়ে বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
৫. মিলিটারি এয়ারবেসের আশেপাশে অবৈধ, উচ্চতা লঙ্ঘনকারী ও অননুমোদিত ভবনসমূহ দ্রুত অপসারণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন নির্মাণে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, উপরোক্ত দাবি ও সুপারিশসমূহ ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে কার্যকর না হলে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে রিট আবেদন দায়ের করা হবে।
আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন,
এই নোটিশ শুধু সামরিক শক্তির উন্নয়নের কথা বলে না, এটি একটি জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ। শিশুদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আধুনিক যুদ্ধবিমান ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা একেবারেই অসম্পূর্ণ।
তিনি আরও বলেন,
একদিকে পুরনো বিমান আরেকদিকে মিলিটারি এয়ারবেস ঘিরে ঝুঁকিপূর্ণ আবাসিক এলাকা — এই দ্বৈত সংকট এখনই সমাধান না করলে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হব আমরা।