ঢাকার নিকেতনের এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে তার বাসার গৃহকর্মী দুই শিশু নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে তাদের পরিবার। ১২ বছরের তৃষা ও ১১ বছরের সুমাইয়া নামে ওই দুই মেয়ে সম্পর্কে ফুপু-ভাতিজি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বাসিন্দা।
অভাবের কারণে পরিবার তাদের পাঠিয়েছিল ব্যারিস্টার মো. ওমর শোয়েব চৌধুরীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজে। তবে শিশু দুজনের অভিযোগ— সেখানে তারা নিয়মিত ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
শিশুদের অভিযোগ: খুন্তির ছ্যাঁকা, কারেন্টের শক, লাঠির আঘাত
তৃষা ও সুমাইয়া জানায়, বাসায় সামান্য ভুল হলেই তাদের গরম খুন্তির ছ্যাঁকা, কারেন্টের শক ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হতো। এমনকি কাউকে কিছু জানালে ‘মেরে ফেলার’ হুমকি দেওয়া হত।
তৃষার শরীরে পোড়ার ফোসকা ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দেখা গেছে। আদালতে তৃষা বলেন:
আমাদের প্রতিদিনই মারধর করা হয়েছে। খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে, কারেন্টের শক দিয়েছে, লাঠি দিয়ে মেরেছে। এমনকি দাঁতও পড়ে গেছে।
সুমাইয়া অভিযোগ করে বলেন, কাজ শেষে রাতে ব্যারিস্টার ওমরের পা টিপে দিতে বাধ্য করা হতো। ঘুম পেয়ে চোখ বুজে ফেললে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হত।
মামলা ও আদালতের নির্দেশনা
তৃষার বাবা জুয়েল মিয়া মঙ্গলবার রাতে গুলশান থানায় মামলা করেন। বুধবার মামলাটি আদালতে উপস্থাপন করা হলে ঢাকা মহানগর হাকিম মেহেরা মাহবুব অভিযোগ আমলে নেন এবং গুলশান থানাকে আগামী ১৪ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় শিশু দুজনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। আদালত তাদের পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. সালাউদ্দিন কাদের সাউন বলেন, “দরিদ্র পরিবার, অভাব-অনটনের কারণে মেয়ে দুটোকে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিল পরিবার। কিন্তু তাদের পা টেপানোর মত অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হত। রাজি না হওয়ায় নির্যাতন করা হত।”
পরিবারের অভিযোগ
তৃষার বাবা বলেন,
অভাবের কারণে মেয়েকে কাজে দিয়েছিলাম যেন ভালোভাবে থাকতে পারে। কিন্তু যে নির্যাতন করেছে তা অকল্পনীয়। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
তিনি আরও জানান, মেয়ের কয়েক মাসের বেতনও বকেয়া রয়েছে।
সুমাইয়ার বাবা বাবুল মিয়া বলেন,
শিশুরা শুধু বাসার কাজই করত না, বরং গৃহকর্তাকে পা টিপতে বাধ্য করা হত। সামান্য ভুলে মারধর করত। একজন শিক্ষিত মানুষ কীভাবে শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে তা কল্পনার বাইরে।
আইনজীবীর পরিবারের দাবি: ‘ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে’
অভিযোগের বিষয়ে ব্যারিস্টার ওমর শোয়েব চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্ত্রী সাথী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
উনি তো বাসায় থাকেন না, নির্যাতন করবে কেমনে? উল্টো ওরা (শিশু) আমাদের বাচ্চাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।
তিনি দাবি করেন, শিশুরা তাদের সন্তানদের দুধে জর্দা মিশিয়ে দেওয়া, পানিতে চুবিয়ে রাখা এবং খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশানোর মতো কাজ করেছে। যদিও পরে তিনি স্বীকার করেন, তৃষাকে কয়েকবার থাপ্পড় মেরেছিলেন।
সাথী অভিযোগ করেন, শিশুর পরিবার অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়ায় তার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। তবে শেষে তিনি বলেন:
এক হাতে তালি বাজে না। দোষ সবারই আছে। আমরা চাইলে বিষয়টা ঠিক করা যেত, কিন্তু তারা সুযোগ দিচ্ছে না।
পুলিশি পদক্ষেপ
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মো. জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ব্যারিস্টার ওমর শোয়েব চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হবে।
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম