ছবি : কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকের এজলাস
ছবি : কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকের এজলাস

কক্সবাজারে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের ঐতিহাসিক রায়

একই মামলায় এক আসামির ফাঁসি, যাবজ্জীবন, সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারে শিশু ধর্ষণপূর্বক হত্যা ও লাশ গুম করার মামলায় এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে চারটি পৃথক ধারায় মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ২ বছর ১ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ওসমান গণি এ রায় ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু

দণ্ডিত আসামী হলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চাকমারকুল গ্রামের মৃত সৈয়দ করিম ও ফিরোজা বেগমের ছেলে মো. সোলেমান (২৮)

রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি অ্যাডভোকেট মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু এবং আসামি পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভেন্দু বিকাশ সাহা।

মামলার পটভূমি

২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাইরার ডেইল গ্রামের আয়াত উল্লাহর কন্যা, প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়া (৬) স্কুল শেষে খেলতে বের হলে নিখোঁজ হয়ে যায়।

পরদিন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মাহিয়ার বাবার মোবাইলে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় মাহিয়ার পিতা আয়াত উল্লাহ বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও দণ্ডবিধিতে মামলা দায়ের করেন।

  • মামলা নং: মহেশখালী থানা মামলা ০২ (তারিখ ০৩/১২/২০২২)

  • জিআর মামলা নং: ২৯৪/২০২২

  • নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা নং: ১১৮/২০২৩

বিচার প্রক্রিয়া

মামলায় আসামী মো. সোলেমানকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শামীম জানান, মামলাটি কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই  চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।

ছবি : মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী মোঃ সোলেমান (মাঝখানে)
ছবি : মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী মোঃ সোলেমান (মাঝখানে)

মামলায় ২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয় বলেও জানান বেঞ্চ সহকারী।

রায়ের বিস্তারিত

রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ওসমান গণি মামলার একমাত্র আসামি মো. সোলেমানকে— নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় মৃত্যুদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করে। একই আইনের ৭ ও ৮ ধারায় পৃথকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রতিটি ধারায় ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড (মোট ১ লাখ টাকা), অনাদায়ে আরও ২ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এছাড়াও দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ১ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আসামিকে প্রদত্ত সকল সাজা একত্রে চলবে। রায় ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়।

পিপি অ্যাডভোকেট মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু জানান, তিনি গত ১০ মাস আগে রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।