এআই ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও পরিবর্তন মোকাবিলায় আইনজীবীদেরও প্রস্তুত হতে হবে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আইনজীবীদেরও প্রস্তুত হতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কন্টিনিউয়িং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি) প্রোগ্রাম ফর অ্যাডভোকেটস এবং ডিজিটাল বিএলডি অব বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন উপলক্ষে এর আয়োজন করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।

আইন পেশায় ব্যাপক অধ্যয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সারা বিশ্বে আইন পেশায় দ্রুত পরিবর্তন আসছে। প্রচলিত আইনি অনুশীলন আর যথেষ্ট নয়; একটি আধুনিক, কার্যকর ও গণমুখী বিচারব্যবস্থা গড়তে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা এবং নৈতিক সক্ষমতা অর্জন এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনগত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে সুপরিকল্পিত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো ডিজিটাল রূপান্তর, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, তথ্যভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার ও পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের আইনজীবীদেরও প্রস্তুত হতে হবে।

প্রধান বিচারপতি বিগত ১৬ মাসে বিচার বিভাগ সংস্কারের উদ্দেশে নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন, সারাদেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও বিভাগীয় আদালতে চালু হওয়া হেল্পলাইন সার্ভিস, পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হওয়া হাইকোর্টের দুটি পেপার-ফ্রি বেঞ্চ, ডিজিটাল অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় কজলিস্ট ব্যবস্থাপনা, দ্রুত মামলা প্রসেসিং সিস্টেম চালুকরণ এবং পেপার-ফ্রি পারিবারিক আদালতের মতো উদ্যোগ বা সংস্কার বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়িয়েছে।

একটি সংস্কারমুখী বিচার বিভাগকে সমর্থন করার জন্য একটি রূপান্তরমুখী আইনজীবী সমিতি অপরিহার্য বলেও মনে করেন তিনি।

ডিজিটাল বিএলডি প্ল্যাটফর্মকে বিচার বিভাগের ডিজিটাল উন্নয়ন অভিযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উল্লেখ করে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, এটি প্রশিক্ষণ তদারকি, দক্ষতার মানদণ্ড নির্ণয় এবং গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। একটি তথ্যসমৃদ্ধ বার কাউন্সিল আইন পেশার স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বাড়াবে।

তিনি বলেন, আইনজীবীদের সিপিডি কর্মসূচি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অপরিহার্য। আইনজীবীরা নিয়মিতভাবে তাদের জ্ঞান হালনাগাদ করলে যুক্তি উপস্থাপন উন্নত হয়, বিচারপ্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হয়, আদালতের সময় বাঁচে এবং আদালতের সক্ষমতা বাড়ায় বিচারে বিলম্ব কমে। একজন সুশিক্ষিত আইনজীবী শুধু ক্লায়েন্টেরই সম্পদ নন, বরং তিনি একটি কার্যকর বিচারব্যবস্থারও অন্যতম স্তম্ভ।

আইনজীবীদের বিশেষায়িত আদালতে কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাণিজ্য আইন, পরিবেশ আইন, ডিজিটাল ও সাইবার আইন, পারিবারিক আইন, জলবায়ু মামলা সংক্রান্ত এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আইনের মতো সমসাময়িক ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য করেন- বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বার কাউন্সিলের সচিব (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার।