অ্যাড. আলিফ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি চট্টগ্রামের আইনজীবীদের

চট্টগ্রামে ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আদালতে হাজিরা নিয়ে সংঘর্ষের মধ্যে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের একবছর পূর্ণ হলো আজ। বছর পার হলেও মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও সহকর্মী আইনজীবীরা। সেই সঙ্গে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবিও জোরালো হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানান আইনজীবীরা।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ত্রাস সৃষ্টি করে চিন্ময়ের অনুসারীরা। প্রায় তিনঘণ্টা তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত এলাকায় আটকে রাখে তারা। এক পর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময়ে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে আদালত প্রাঙ্গণের অদূরে নগরীর বাণ্ডেল রোডে সেবক কলোনির সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা সবাই চিন্ময়ের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

তবে জামাল উদ্দিনের করা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর নাম ছিল না। চলতি বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে চিন্ময়কে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন। আদালত গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।

এরপর ১ জুলাই চিন্ময়কে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তবে অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানিতে আদালত মামলা থেকে একজন আসামির অব্যাহতির জন্য তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ নাকচ করেন। ফলে এখন ওই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ৩৯ জন।

চিন্ময় বাদে বাকি আসামিরা হলেন- চন্দন দাস মেথর, রিপন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য, শুভ কান্তি দাস, আমান দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, ওমকার দাস, বিশাল, লালা দাস, সামীর, সোহেল দাশ রানা, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবীচরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাস, সুমিত দাস, সনু দাস, সকু দাস, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস, দ্বীপ দাস ও সুকান্ত দত্ত।

মামলার আইনজীবী ও চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, অভিযোগপত্রের ৩৯ আসামির মধ্যে ২১ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ১৮ জন এখনো পলাতক। পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত আছে। পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

নিহত আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, আমার ছেলেকে আর ফেরত পাওয়া যাবে না। কিন্তু যারা হত্যা করেছে, তারা শাস্তি পাক- এটাই চাই। এক বছর পার হলেও বিচার শুরু না হওয়া কষ্টদায়ক। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হোক।

এদিকে আলিফ হত্যাকাণ্ডের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার সকাল ১০টায় আইনজীবী ভবনের সামনে দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিকেল ৩টায় সমিতির অডিটোরিয়ামে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, একজন আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা বিচার বিভাগ, আইনজীবী সমাজ ও ন্যায়বিচারের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। আমরা চাই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক আসামি দ্রুত আইনের আওতায় আসুক।

সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী বলেন, যেকোনো হত্যার বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু একজন আইনজীবীর হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার আরো জরুরি। কারণ আইনজীবীরা সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই আলিফ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্বিত হলে, আইনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।