১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দেশের অন্যতম বৃহত্তর জেলা কিশোরগঞ্জ জজ আদালতের প্রধান দুটি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ফলে শুনানি না হওয়ায় একদিকে যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে বাড়ছে মামলাজট। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিচারক না থাকায় অসন্তুষ্ট আইনজীবীরাও।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় সর্বশেষ কর্মরত জেলা ও দায়রা জজ মুহম্মদ মাহবুব উল ইসলাম গত বছরের ১ ডিসেম্বর অবসর নেন। কিন্তু তার পর থেকে এ পর্যন্ত নতুন কেউ এ পদটিতে যোগ না দেওয়ায় তিন মাস ধরে শূন্য রয়েছে পদটি।
তারও আগে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পদাধিকার বলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এ জি এম আল মাসুদ বদলিজনিত কারণে বিদায় নেন গত বছরের ১৫ নভেম্বর। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ পদটিও শূন্য রয়েছে।
এ ছাড়া দেওয়ানি আদালতে আরো একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী জজের পদও শূন্য রয়েছে দীর্ঘ ছয় মাস।
জেলা জজ আদালতে বিচারকের প্রধান দুটি পদ শূন্য থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে আদালতের বিচারকাজ। জামিন আবেদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দৈনন্দিন শুনানি ও নির্ধারিত তারিখে বিচারাধীন শত শত মামলার শুনানি না হওয়ায় প্রতিদিন হয়রানি ও ভোগান্তির মুখে পড়ছেন বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ। টাকা ও সময় খরচ করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন বিচার না পেয়েই ফিরে যাচ্ছেন।
তবে এ অবস্থায় দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহিম নিজ আদালতের দায়িত্ব পালনের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অত্যন্ত জরুরি বিবেচনায় জেলা ও দায়রা জজ ও প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দৈনন্দিন কিছু শুনানি নিষ্পত্তি করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিচারক না থাকায় অসন্তুষ্ট আইনজীবীরাও। যত দ্রুত সম্ভব শূন্য পদে বিচারকের নিয়োগ আশা করছেন তাঁরা।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, বিচারকের পদ শূন্য থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণের কষ্ট হচ্ছে এবং বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। অবিলম্বে শূন্য পদগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন বলেন, এত বড় একটি জেলায় এত দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিচারকদের পদ শূন্য থাকা দুর্ভাগ্যজনক। বিচারক না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরা হয়রানি হচ্ছেন।
অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, বিচারক না থাকায় বিচারকাজে বিঘ্নতা ও দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। জামিনের আবেদন ও বিশেষ করে আপিল ও রিভিশন মামলার শুনানি সম্ভব হচ্ছে না।
অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন সিদ্দীকি ও অ্যাডভোকেট রূপক রঞ্জন রায় জানান, বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘবে দ্রুত বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবদুর রায়হান বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আইন মন্ত্রণালয় বিচারক নিয়োগ প্রদানের কাজটি করে থাকে। তাই এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’