চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ (সাধারণ সম্পাদক) থেকে অপসারণ হওয়া গোলাম রাব্বানীকে ডাকসুর জিএস পদ থেকে অপসারণ ও ঢাবিতে অবৈধভাবে এমফিলে ভর্তির সব কার্যক্রম বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পাশপাশি নোটিশে তার এমফিলে অবৈধভাবে ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্যও বলা হয়েছে।
ডাকসুর অপর জিএস প্রার্থী রাশেদ খানের পক্ষে সোমবার (৪ নভেম্বর) ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে এ নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর চেয়ারম্যান ঢাবি ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম নোটিশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, আগামী সাতদিনের মধ্যে গোলাম রাব্বানীর ছাত্রত্ব বাতিল ও জিএস পদ থেকে অপসারণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সময় দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নোটিশের বিষয়ে আইনজীবী জানান, বৈধ ছাত্র না হয়েও গোলাম রাব্বানী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ছাত্রত্ব দেখিয়েছেন। আর বৈধ ছাত্র হিসেবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ ছাত্র হয়েও যারা বৈধ ছাত্র দেখিয়ে জয়ী হয়েছে তাদের সকলের পদ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে নোটিশে।
সেখানে বলা হয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ডাকসু নির্বাচনের সময় গোলাম রাব্বানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বৈধ ছাত্র ছিলেন না। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ছাত্রত্ব দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। যেহেতু বৈধ ছাত্র ছিলেন না সেহেতু তার ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে থাকা অবৈধ।
এতে আরো বলা হয়, ঢাবি ভিসি এ বিষয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকায় আছেন। যা দুর্ভাগ্যজনক। ডাকসু সাধারণ সম্পাদক বৈধ ছাত্র নন এটা প্রকাশের পর ভিসি কোনো তদন্ত বা পদক্ষেপ নেননি। বরং নীরব থেকে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। আন্দোলন ও নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ও প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী ভিসির কাছ থেকে এ ধরনের নীরবতা হতাশাজনক।
এ ব্যাপারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ডাকসুর জিএস প্রার্থী রাশেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী নিয়মবহির্ভূতভাবে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে এমফিলে ভর্তি হয়েছেন, যা সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম পরিপন্থী। রাব্বানীর ভর্তি নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
তিনি আরও বলেন, রাব্বানীর ভর্তি পরীক্ষার বিষয় বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও উপাচার্য ছাড়া কেউই জানেন না। ভর্তি নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম ম্যাম কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, ডাকসুর জিএস অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ছাত্রত্ব নিয়েছেন। আজ আদালতের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। নোটিশে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে জবাব দিতে না পারলে আমরা আদালতে রিট পিটিশন করব।
উল্লেখ্য, একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর এমফিল (মাস্টার অব ফিলোসফি) ভর্তিতে অনিয়ম করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের এমফিলের ছাত্র হিসেবে তিনি ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
কিন্তু ঢাবির এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী এমফিলে ভর্তি হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদনের পর বিভাগের একাডেমিক কমিটি, অনুষদ সভা, বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সভার সুপারিশের পর একাডেমিক পরিষদের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গোলাম রাব্বানীকে এমফিলে ভর্তির ক্ষেত্রে অনুষদ সভার সুপারিশ ছিল না। এমনকি বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ ও একাডেমিক পরিষদের নিয়মিত যে এজেন্ডা, সেখানেও তার নাম পাওয়া যায়নি।
আরও জানা যায়, রাব্বানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে তার স্নাতকোত্তর শেষ হয়। এরপর এমফিলে ভর্তি হয়ে তিনি গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ওই নির্বাচনে জিএস নির্বাচিত হন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবিসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়েন গোলাম রাব্বানী।