বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কোনো জলস্যুতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাজা যাবজ্জীবন রেখে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইনের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দাকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস এবং চুরি করতে গিয়ে কেউ খুন হলে সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।
‘আর সাধারণ কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্রে সন্ত্রাস করলে তার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দস্যুতা করে নেওয়া সম্পদ ফরফিট (বাজেয়াপ্ত) করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্রে সন্ত্রাস বা সংঘটনের চেষ্টা বা সহায়তা করলে অনুর্ধ্ব ১৪ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আর কেউ সহযোগিতা করলেও ১৪ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
দেশি-বিদেশি সবার জন্য এই আইন কার্যকর হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় জলসীমায় চলাকালীন কোনো বিদেশি জাহাজে কোনো অপরাধ হলে অপরাধী গ্রেফতার ও দন্ত পরিচালনায় একই বিধান কার্যকর হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন।
‘পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড নেশন্স কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সী শীর্ষক’ কনভেনশন গৃহীত হলে একই বছরের ১০ ডিসেম্বর কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সী’ কর্তৃক প্রদত্ত হয় এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্র সীমা নির্ধারণে ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী উপকূলীয় দেশের মধ্যকার সমুদ্র সীমা নির্ধারণ হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য লেজিসলেটিভ বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব অর্পণ করেন।’
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্রসীমা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সমাঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌ চলাচলের নিরাপত্তা বিরোধী অবৈধ অবৈধ কর্মকাণ্ড দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, দূষণ করা ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন, পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতি, ব্লু ইকোনমিসহ অন্যান্য বিষয়ে বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে আইনের খসড়া প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সুনীল অর্থনীতির উপর গুরুত্ব প্রদান করছে। সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই অনুসন্ধান ও আহরণ হতে সর্বোচ্চ উপযোগিতা প্রাপ্তির পূর্ব শর্ত হলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সঠিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণ।
‘আইন প্রণীত হলে তা ব্যাপক ভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় ও জলসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।’
‘এছাড়া জলসদ্যুতা, সমুদ্র সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ এবং নৌ চলাচল নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বেআইনি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।