রাজধানীর বায়ু দূষণ করায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষকে মোট তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্মাণকাজের সময় নিয়ম মেনে ধুলা নিয়ন্ত্রণ না করায় তাদের ওই জরিমানা করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে কয়েকটি স্থানে স্তূপ করে মাটি ফেলে রাখতে দেখে। তখন সেখানে কর্তব্যরত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সারা দিন এভাবে তারা মাটি উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখে। রাতে তা ট্রাকে করে সরানো হয়। প্রায় প্রতিদিনই তারা এভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
নিয়ম অনুযায়ী এসব অবকাঠামো নির্মাণের স্থানে নির্মাণ সামগ্রী ও বালু-সিমেন্ট এবং মাটি ঢেকে রাখতে হয়।
এর আগে গত বছর রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে তিন দফা চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। মেট্রোরেল নির্মাণের সময় নিয়ম অনুযায়ী ধুলো নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। পরিবেশ অধিদপ্তরে ওই সংস্থাটির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় তাদের ধুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলে। এ বছরও এক দফা চিঠি ও সর্বশেষ গত সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভাতেও রাজধানীর বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে এসব সংস্থা গুলিকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। বলা হয় তাদের সড়কের পাশের মাটি ও নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বেগম রুবিনা ফেরদৌসী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেট্রোরেল ও এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমরা কয়েক দফা ধুলা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে গিয়ে মানমাত্রার চেয়ে বেশি ধুলো পায়। যে কারণে আমরা ওই জরিমানা করেছি।’
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কাজী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা সামনে কী করছি সে বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। পরবর্তী পদক্ষেপ আপনারা দেখতে পারবেন।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বনানী এলাকা নৌবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ের সামনের স্থানটি পরিদর্শন করে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনো একটি এলাকা বাতাসে এসপিএম বা ধূলিকণার পরিমাণ (এসপিএম) প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে সর্বোচ্চ ২০০ মিলিগ্রাম থাকার কথা। মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস প্রকল্প এলাকার বায়ুর গুণগত মান পরীক্ষা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে আগারগাঁও এলাকায় প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে এসপিএম পাওয়া যায় ৮২০ মিলিগ্রাম, মিরপুর দশ নম্বর গোলচত্বরে ৭৬৪ ও বনানী মোড়ে ৬০৫ মিলিগ্রাম। এই মাত্রায় ধূলিকণা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।
বনানীতে অভিযান পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদুল ইসলাম ও মিরপুরে করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তামজিদ আহমেদ।