কাজী শরীফ:
আগামীকাল সকালেই পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় আমার সাতানব্বই জন সহকর্মী বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করবেন। তাঁদের অভিনন্দন।
আমি মূলত তাঁদের অভিনন্দন জানাতে লিখছিনা। লিখছি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে। আজ আইন সম্পর্কিত বিভিন্ন পেইজে দেখলাম অনলাইন পত্রিকার বরাত দিয়ে লিখেছে “বাবা সিকিউরিটি গার্ড, মা কাজের বুয়া : ছেলে এখন জজ।”
অনেকেই এটাকে খুব অনুপ্রেরণাদানকারী ঘটনা বলে মনে করলেও আমি এটাকে খুবই দুর্বল, নীতিবিরুদ্ধ ও অশ্লীল শিরোনাম বলে মনে করি।
আমার বক্তব্যের আমি ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য।
আমি মূলত দুটো কারণে এ শিরোনামের বিরোধিতা করছি।
প্রথমত, সিকিউরিটি গার্ড কিংবা বুয়ার পেশাকে অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। এ শিরোনাম দ্বারা এ দুটো পেশাকে ছোট করা হয়েছে। এদেশের আইনে নিষিদ্ধ নয় এমন কোন কাজকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আপনি বলতে পারেন এ দুই পেশাকে ছোট করা হয়নি। আমি মানতে পারছিনা। কারণ বাকি ছিয়ানব্বই জনের বাবা মা কী করেন সে বিষয়ে আপনারা লিখলেন না। শুধু একজন ব্যক্তির বেলাতেই তাঁর মা বাবার পেশা আলোচনায় আনলেন কেনো? “দরিদ্রতাকে জয় করে আজকের জজ” এমন শিরোনাম দিয়েও লেখা যেতো! সেটা না করে বাড়তি পাঠক টানতে যে পথ বেছে নিলেন সেটা একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মুনমুন – ময়ূরীদের সিনেমার পোস্টারে অর্ধ উন্মুক্ত বক্ষ প্রদর্শনের মত বলেই আমার মনে হয়েছে!
দ্বিতীয়ত, আপনি একজন বিচারককে সমাজের কাছে, তাঁর সহকর্মী, আইনজীবী ও মক্কেলদের চোখে আলাদা করে দেয়ার অপচেষ্টা করলেন। তাঁর প্রতি যে বিস্ময় কিংবা করুণা নিয়ে একজন মানুষ তাকাবে তা তাঁর অত্যন্ত ভারী চেয়ারের কাছে অতি নগণ্য হলেও অধর্তব্য নয়!
যে সাংবাদিক এ প্রতিবেদন করলেন তিনি কি অস্বীকার করতে পারবেন যে তার শরীরে কৃষকের রক্ত নেই? আমাদের সবার হয় দাদা, নয় বাবা কিংবা পরদাদা কৃষক ছিলেন। আমাদের সবার শরীরে যে কৃষকের রক্ত তা নিয়ে কেউ লিখেনা! আমরা ভুলে যেতে চাই আমাদের অতীত। তাহলে আমার সহকর্মীকে আপনি কেনো বিশেষ ট্যাগ লাগাচ্ছেন!
যেদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে সেদেশে দরিদ্র মানুষ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক, শিক্ষক, সাংবাদিক হবে সেটাই স্বাভাবিক।
এ প্রতিবেদনের কোন সংবাদমূল্য যেমন নেই তেমনি এটা অন্য পেশাকে অবমূল্যায়ন করেছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
তাই এ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য প্রতিবেদক, সম্পাদক ও প্রকাশকের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
লেখক: সহকারী জজ, নোয়াখালী