১৯৭১ এর অপরাজিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও সাবেক এমএনএ অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম আর নেই। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান- এর সহধর্মিণী।
মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কমকে জানান, ১৬ মে শনিবার দিবাগত রাত ১২.২০ মিনিটের সময় ধানমন্ডি (নর্থ রোড) এর নিজ বাসায় করেন ইন্তেকাল করেছেন। রবিবার ১৭ মে বাদ যোহর ভূতের গলি (নর্থ রোড) বড় মসজিদে মরহুমার জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কমকে এই তথ্য জানান।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রী জীবনের সংগ্রামী কর্মকাণ্ডের নিকটতম সঙ্গী মমতাজ বেগম৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তৈরির কাজে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের ভেতরে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বীর নারী৷
১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ভর্তি হন মমতাজ৷ সেসময় স্নাতক – সম্মান কোর্সের ছাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা৷ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা দেওয়ার আগে মমতাজ ছিলেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট৷ আর অন্যদিকে, আজকের জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট৷ ফলে এই দুই সংগ্রামী নেত্রী একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তোলেন৷ তাঁরাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেন৷ সেই থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন মমতাজ৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বাড়ি মরিচা হাউসে মহিলাদের সামরিক ও প্রাথমিক পরিচর্যার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন মমতাজ৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী – বিএসএফ’এর সদর দপ্তরে অস্ত্র চালনা এবং যুদ্ধ পরিচালনার উপর প্রশিক্ষণ নেন৷ এসব বিষয়ে অন্যান্যদের নানা স্থানে প্রশিক্ষণ প্রদানও করেন তিনি৷ ২৫শে মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর৷ ‘মহিলা সংঘ’ নামে একটি সেবা সংগঠনের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করেন তিনি৷
এমনই অসংখ্য করুণ পরিস্থিতি পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন মমতাজের মতো বীর নারী-পুরুষ৷ তবে স্বাধীনতার পরও থেমে যাননি মমতাজ৷ চালিয়ে গেছেন দেশ ও জাতি গড়ার কাজ৷ অধ্যাপনা, রাজনীতি এবং আইন পেশার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি৷ ২০০৯ সালের ১২ই মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করে করছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে৷