চার মাসের সাজার আপিল নিষ্পত্তি হয়নি ৪৯ বছরেও
উচ্চ আদালত

কন্যাসহ স্ত্রীকে খুনের দায়ে ২০ বছর জেলে থাকার পর রায় এলো আসামি নির্দোষ

১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে দেড় বছরের কন্যাসহ স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহিদ শেখকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে জাহিদ অন্তত ২০ বছর পর মুক্তি পেতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে শেখ জাহিদের করা জেল আপিল শুনানি নিয়ে তা মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) এ রায় দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ।

আসামির আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ বলেন, জাহিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছেন। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দু’একদিনের মধ্যেই আদেশের অনুলিপি কারাগারে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেছেন আদালত।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে জাহিদ কমডেম সেলে আছেন। আপিল মঞ্জুর হওয়ায় এখন তার কারামুক্তিতে বাধা নেই। আপিল বিভাগ রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে আসামিকে দ্রুত মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিকে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পেয়ে তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে

১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি জাহিদ শেখ এর শ্বশুর বাগেরহাটের ফকির হাট থানার উত্তর পাড়ার ময়েন উদ্দিন থানায় এজাহার দায়ের করেন। ওই এজাহার মতে, ময়েন উদ্দিনের মেয়ে রহিমার সঙ্গে ঘটনার তিন বছর আগে খুলনার রূপসা থানার নারিকেলি চাঁদপুরের ইলিয়াছ শেখের ছেলে জাহিদ শেখের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর জাহিদ ঘরজামাই থাকতো। পরে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। নাম রেশমা খাতুন। ঘটনার তিন মাস আগে রহিমা তার জামাই এবং বাচ্চাসহ বাবার বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি পাকা ঘরে বসবাস শুরু করে।

১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ময়েন উদ্দিনের স্ত্রী আনজিরা বেগম মেয়ের বাড়িতে গেলে দেখেন দরজা বন্ধ ও তালা খোলা। বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখেন খাটের ওপর কাঁথা ও লেপের নিচে বাচ্চাসহ রহিমাকে শোয়া। কাঁথা সরানোর পর মৃত অবস্থায় তাদের গলায় মাফলারের গিট দেওয়া দেখতে পান আনজিরা বেগম। তখন কান্নাকাটি ও চিৎকার করলে পার্শ্ববর্তী লোকজন দৌড়ে আসেন। এদিকে সকাল নয়টার সময় জাহিদকে টেম্পু করে খুলনার দিকে অনেকে যেতে দেখেন। ময়েন উদ্দিনের সন্দেহ হয় জাহিদ শেখ তার মেয়ে ও নাতনিকে রাতের যে কোনো সময় হত্যা করে পালিয়ে গেছেন।

২০০০ সালে এ মামলায় বিচারিক আদালত জাহিদ শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০০৪ সালে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। পরে কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জাহিদ শেখ আপিল করেন। শুনানি শেষে মঙ্গলবার তার আপিল মঞ্জুর করা হয়।