চন্দন কান্তি নাথ:
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সুবিচার ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য পবিত্র সংবিধান রচিত হয় এটি অক্ষুণ্ন রাখা এবং রক্ষণ সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করা, সকলের পবিত্র কর্তব্য। সংবিধান ও আইন মান্য করা তথা নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং সকল সময়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। সংবিধানেই রয়েছে শিশুদের জন্য বিশেষ বিধান করা যায় সে কারণেই ১৯৭৪ সনের শিশু আইন এবং পরবর্তীতে শিশু আইন ২০১৩, প্রণীত হয়। উক্ত আইনে শিশুর ১৬৪ ধারার কথিত জবানবন্দির বিষয়ে কিছু নেই । শিশু আইন, ২০১৩ একটি বিশেষ আইন। এটি ফৌজদারি কার্যবিধির উপরে প্রাধান্য পাবে। কিন্তু উক্ত আইনের বিধান অমান্য করে জবানবন্দি গ্রহণের প্রক্রিয়া চালু আছে।
গত ২৮/০৮/২০১৯ তারিখে সর্বসম্মতভাবে মাননীয় বিচারপতি মোঃ শওকত হোসাইন, বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস এবং বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মুবিন বৃহত্তর বেঞ্চ হতে আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলায় শিশুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দির সাক্ষ্যগত মূল্য নেই এবং উক্ত জবানবন্দির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা যায়না মর্মে উল্লেখ করেছেন।পবিত্র সংবিধানের ১৫২ অনুসারে উক্ত রায় এমন একটি আইনগত দলিল, যা আইনের ক্ষমতা সম্পন্ন। অনুচ্ছেদ ১১১ অনুযায়ী উক্ত আইন অধস্তন আদালতের জন্য অবশ্যই (Shall) পালনীয় হবে । অথচ বাস্তবতা ভিন্ন স্নায়ু বিজ্ঞান এবং মনস্তত্ত্ব গবেষণা অনুযায়ী শিশুরা তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নন। তারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় ব্রেনের সে অংশ পরিপক্ব হয় না। সে কারণে শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোন সাক্ষ্যগত মূল্যও নেই।
আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয় ,
” Recording of confession under section 164 of the CrPC is a part of adversarial trial system and formal part of the procedures of the mainstream Courts/Tribunals. Its use against a juvenile offender is, therefore, contrary to the fundamental notion of juvenile justice system. Research on neuroscience and child psychology suggests that the juveniles/adolescents are not fully capable of comprehending the consequences of their acts and deeds. They can also not control their impulses. In fact, the part of brain that enables impulse control and improves the ability of making a reasoned decision does not fully develop in adolescent age. Similarly, the children/juveniles are unable to comprehend the legal consequence of confessional statements. In many cases, they take the blame of crime they did not commit just to end the interrogation. It should be borne in mind that the children can easily be influenced and they have tendency to admit guilt for different purposes. Sometimes they falsely confess to have committed an offence if there is possibility of getting some benefits therefrom. ”
শুধু তাই নয় Bangladesh Legal Aid and Services Trust and another Vs Bangladesh and others, ২২ বি এল ডি, পৃষ্ঠা ২০৬ মামলাতেও রিট এক্তিয়ারে শিশুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দির ভিত্তিতে সাজা এক্তিয়ার বিহীন ঘোষণা করা হয়। উক্ত রায়ে বলা হয়, ” The confession made by a child is of no legal effect ” প্রায় একইভাবে Jaibir Ali Fakir Vs State, ২৮ বি এল ডি, পৃষ্ঠা ৬২৭ এ ১৪ নং পারাগ্রাফ এ একই রূপ সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলাটি ১৯৭৪ সনের আইনের অধীন ঘটনার উপর উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়। তবে মামলা চলাকালীন শিশু আইন, ২০১৩ প্রণীত হয়। সে কারণে রায়ে বলা হয়,
“After publication of the Jaibar Ali Fakir’s case and during pendency of the present appeal the Children Act, 1974 has been substituted by the Shishu Ain, 2013, section 47 (1) whereof provides that during investigation, a police-officer assigned to the child-desk may record statement of a juvenile offender, but in presence of his parents/legal guardians/any other member of his extended family and also a probation officer or social welfare officer. Section 25 of the Evidence Act says that no confession made to a police-officer shall be proved as against an accused and section 26 thereof further says that no confession made by any person in custody of police-officer shall be proved as against him. From a combined reading of the said provisions of law it can be inferred that in order to carry out investigation and find out the names of other offenders, if any, a child can be interrogated. But no provision of making confession and using the same against him is provided within the subsequent enactment in 2013.
When the case of Jaibar Ali Fakir was already published and before that, the provisions of recording confessional statement by an accused were already there in different laws, the legislature, in the repealing law i.e in the Ain, 2013, could have easily incorporated the provision of recording such confession by a child in conflict with the law and awarding punishment on him on that basis, but it did not do so. It can be said thus the legislature deliberately omitted to make such law. Every word in a law has a definite meaning and similarly every intentional omission should be given a meaning. The omission in the Ain, 2013 of making confession by a child has also a meaning that a child is not supposed to make a confession. For a clear understanding of the legislative intent and for interpreting the scope of recording confessional statement of a child within the scope of Children Act we may also take recourse to the oft-quoted Latin doctrine, expressum facet Cesare tectum meaning express mention of one thing implies exclusion of other. Indian Supreme Court, in number of cases, has applied this doctrine to enunciate the principle that expression precludes implication. ”
শিশু আইন, ২০১৩ এর বিষয়ে বিস্তারিত উক্ত রায় এর মধ্যে আলোচনা করা হয়। রায়ে বলা হয়,
“Similarly the Shishu Ain, 2013 in its definition clause [section 2 (3)] used the phrase ‘children in conflict with the law’ and prohibited the words ‘guilty’, ‘convicted’ and ‘sentenced’ to indicate any child in conflict with the law. On the other hand, section 164 read with section 364 of the CrPC speaks of confession of “accused” to be made before the Magistrate. In view of the discrepancies of the indicative words in the Children Act/Shishu Ain and the Code of Criminal Procedure, we find it difficult to accept that by virtue of section 18 of the Children Act or section 42 of the Shishu Ain, confession of a child under section 164 of the CrPC can be recorded and used against him.”
কিন্তু মাননীয় আপিল বিভাগ জেল পিটিশন নং ৮/২০০৪ ( মোহাম্মদ শুক্কুর আলী বনাম রাষ্ট্র) মামলায় শিশুর ১৬৪ ধারার জবানবন্দির ভিত্তিতে সাজা ঘোষণা করা হয় । তবে রায়টি ২০১৩ সনের অনেক আগে। তথাপি সে মামলার যুক্তি খন্ডন করে আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলায় বলা হয়,
“We have also gone through the judgment passed by the Appellate Division in Jail Petition No. 8 of 2004 (Md. Shukur Ali vs The State) as referred to by the learned Deputy Attorney General. The question of recording confession of child or its evidentiary value was not decided even raised or debated there. It is, therefore, difficult to accept the contention of the learned Deputy Attorney General that the Appellate Division already approved the evidentiary value of confession made by a child. ”
তাছাড়া শিশুর এইরূপ জবানবন্দি গ্রহন না করা উক্ত রায়ে সংবিধানসম্মত ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়,
” In view of the development and spirit of the law, purpose of legislation of the Children Act, 1974 that was in force at the material time and the subsequent Shishu Ain, 2013, one’s constitutional protection from self-incrimination as guaranteed under article 35 (4) and the incompetency of a child to waive this right given to him by the Constitution and also his right to remain silent, use of confession of a child recorded under section 164 of the CrPC against himself is beyond the scope of law. ”
রায়ে পুলিশ বিভাগের প্রতি উপদেশ প্রদান করা হয়। কী প্রক্রিয়ায় এ ধরনের মামলার তদন্ত শেষ করা যাবে তাও বলা হয়। আর কি কারনে এই রূপ দোষ স্বীকার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না তা বলা হয়।রায়ে বলা হয়,
“In our criminal investigation system, the investigating agencies appear to be more interested in taking an accused on remand and extract confession from him rather than collecting reliable and scientific evidence regarding his involvement in the alleged occurrence. In such a position, if the children are brought within the scope of recording confession, the purpose of punishing the real offender may fail and there is every possibility that innocent children will be victimized. It will also keep the investigating agencies confined to remand, coercion, torture and confession based investigation and would narrow down the thorough investigation focusing on collection of better scientific evidence to bring the real offenders to book. Besides, children are the emotional centers of their parents. In our prevailing standard of policing, legalization of their confessions may also open up the scope of blackmailing their parents for extraction of illegal money. We, therefore, completely disapprove the making of confession by a child and use of the same against himself in a juvenile case.”
বিস্তারিত আলোচনা শেষে রায়ের শেষ অংশে বলা হয়, “In view of the discussions made above, our answers to the questions raised in this case are:
(1) Confession of a child in conflict with law recorded under section 164 of the Code of Criminal Procedure has no legal evidentiary value and, therefore, such confession cannot form the basis of finding of guilt against him. ”
আমাদের সংবিধানের ৩১ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রত্যেক শিশুর আইন অনুযায়ী এবং কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে তার জীবন, স্বাধীনতা, দেহ,সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটায়। সংবিধানের ৩২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন শিশুকেও জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত করা যাবে না। ৩৫ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রতিটি শিশু আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত কর্তৃক বিচার লাভের অধিকারী। তাছাড়া ২৫ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতি সমূহের প্রতি শ্রদ্ধা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে এবং এদেশ জাতিসঙ্গের সক্রিয় সদস্য।তাই শিশুদের এই আইনগত অধিকার রাষ্ট্র মানতে বাধ্য এবং বাংলাদেশের পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটগণ ও মানতে বাধ্য।
পরিশেষে বলা যায়, আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র মামলাটির রায় এখনো বহাল আছে। মাননীয় আপিল বিভাগ কর্তৃক তা বাতিল হয়নি। সংবিধানের ১১১ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেটগণ এই রায় মানতে বাধ্য । তাই সাক্ষ্যগত মূল্য না থাকায় রায় ও শিশু আইন ২০১৩,বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শিশুর এরুপ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ ঠিক নয়। আর এ রায়ের পর এরূপ জবানবন্দি বিচার কাজে ব্যবহার বন্ধ হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক : সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কুমিল্লা।