মন্দির ভাঙা জঘন্য অপরাধ উল্লেখ করে ‘ইসলামের কোথায় মন্দির ভাঙার কথা আছে’ এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এসময় ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন রাখার ঘটনায় মাদারীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গোলাম মো. আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও আইনজীবী অলোক কুমার ভৌমিক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কেএম মাসুদ রুমি।
শুনানিতে যা হল
শুনানিতে আদালত বলেন, ‘কে কোরআন রাখলো, আমি তার নামই জানি না। অথচ আমি মন্দির ভাঙলাম। ইসলামের কোথায় আছে মন্দির ভাঙার কথা?’
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মো. আব্বাস চৌধুরী (দুলাল) বলেন, ‘এগুলো নিন্দনীয়।’
তখন আদালত বলেন, ‘শুধু নিন্দনীয় না। এগুলো জঘন্য অপরাধ। ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনি যেই হোন না কেন। আমার ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার কোনো সুযোগ আপনার নেই।’
শুনানির একপর্যায়ে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে আদালত বলেন, ‘তুমি তোমার ধর্ম পালন করো, আমি আমার ধর্ম পালন করি। অথচ আমরা গিয়ে লাফ দিয়ে আরেকজনের মন্দির ভেঙে দেই।’
আদালত বলেন, ‘যদি একটা লোক অন্যায় করে, তবে কেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালাবো? অপরাধটা যে করেছে তার বিচার করতে হবে। তাকে পুলিশে দিন। গণহারে মন্দিরে ভাঙচুর করবেন, এগুলো সহ্য করার মতো নয়। এটা ঠিক না। একটা লোকের দোষের কারণে আপনি মন্দির ভাঙবেন? গিয়ে দেখেন, যারা মন্দির ভাঙছে, তারাই ঠিকমত ধর্মপালন করে না।’
আদালত আরও বলেন, ‘আমাদের নবীজি হজরত মুহাম্মাদ (সা.), যিনি এত মার খেলেন, এত নির্যাতিত হলেন কিন্তু কোথাও তিনি তাদের ওপর নির্যাতন করেননি। এমনকি অন্য ধর্মের ওপর আঘাত হানতে নিষেধ করেছেন। মন্দিরে হামলা কী ধরনের উন্মাদনা বুঝি না। এগুলো শুনলেও খারাপ লাগে। দেশের মধ্যে একটা শান্তি আছে। অথচ তারা অশান্তি করছে।’
এরপর আদালত আসামি আসাদ খোন্দকারের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, ‘কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় মাদারীপুরে জনতা মিছিল বের করে। তখন পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি থানায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। ওই মামলায় আসাদ খোন্দকার ১৭ অক্টোবর গ্রেফতার হন। তবে আমাদের মক্কেলের নাম মামলার এজাহারে নেই। তার কোনো স্বীকারোক্তিও নেই। তাই এসব বিবেচনায় আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।’
পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়া নিয়ে হামলা-ভাংচুর
গত বছরের ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়া যায়। এরপরই দেশের কয়েক স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ওইদিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন।
পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুইজন নিহত হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাদারীপুরেও মিছিল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবালকে চিহ্নিত করে বলে জানায় পুলিশ।