'কোর্ট হিল' থেকে সরাতে হবে আইনজীবী সমিতির ভবনসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা
চট্টগ্রামের কোর্ট হিল

‘কোর্ট হিল’ থেকে সরাতে হবে আইনজীবী সমিতির ভবনসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা

‘কোর্ট হিল’ বা ‘পরীর পাহাড়’ নামে পরিচিত চট্টগ্রামের আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবী সমিতির পাঁচ ভবনসহ সকল ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ এবং নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে গত সোমবার (১৮ জুলাই) আইন মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক চিঠিতে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূইয়া সাক্ষরিত ওই চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, “২০২১ সালের অগাস্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং আর কোনো স্থাপনা যাতে নির্মিত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন।”

“সেই নির্দেশনা অদ্যবধি বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করে অনুমোদনবিহীন একটি বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।”

জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘বাধা উপেক্ষা করে’ গভীর নলকূপ স্থাপন এবং গত জুনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধসের বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

পরীর পাহাড়ে সৃষ্ট ঝুঁকি ও সম্ভাব্য যে কোনো বিপর্যয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি প্রতিরোধে জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচটি বহুতল ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও নতুন কোনো স্থাপনা যাতে নির্মিত না হয় সে বিষয়ে এই নির্দেশনা বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

পেছনের কথা

এর আগেও ২৫টি সরকারি দপ্তর থেকে এই পাহাড়ের ‘অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা’ উচ্ছেদে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়। ‘কোর্ট হিল’ বা ‘পরীর পাহাড়ে’ আইনজীবীদের নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের বিরোধ চলছে গত প্রায় ১১ মাস ধরে।

বর্তমানে এই পাহাড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে।

পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে গত সেপ্টেম্বরে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী।

আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যেই ‘পরীর পাহাড়ের’ ১৩০ বছরের পুরনো দ্বিতল আদালত ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন।

এরপর পরীর পাহাড়কে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা (হেরিটেজ) হিসেবে সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব বিবেচনা করার কথা জানায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ওই পাহাড়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং নগরীর অন্যত্র সরকারি দপ্তর মিলিয়ে মোট ৪৪টি সরকারি অফিস কালুরঘাটে সরিয়ে নিতে একটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে।

১৮৯৩-৯৪ সালে ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে রাইটার্স বিল্ডিং এর আদলে দুই তলা চট্টগ্রাম আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে সোয়া একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভবনে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। পরে বিভিন্ন সময় ভবনটি সংস্কার করা হয়।

২০১০ সালে পুরাতন আদালত ভবনের পিছনে চারতলা নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা হয় ৩২ কোটি টাকা খরচে। শতবর্ষী পুরাতন আদালত ভবনটি সংস্কার করে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এখান থেকে।

সূত্র: বিডিনিউজ