টিকটক ব্যবহার করে অপরাধ করা ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। এই অ্যাপের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সারাদেশে টিকটক নিয়ে হার্ডলাইনে নামে। তখন গ্রেফতারও হয় বেশ কয়েকজন।
এরপরও বাড়তে থাকে এর ব্যবহারকারী। এমনকি খোদ বাংলাদেশ পুলিশের কিছু সদস্যই টিকটক আসক্তিতে মত্ত হয়। তাদের বেপরোয়া আসক্তি ঠেকাতে নির্দেশনা জারি করে সতর্ক করা হয় সদস্যদের।
সম্প্রতি আবারও বাহিনীর সদস্যরা টিকটকে ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করে বাহিনীকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে হেডকোয়ার্টার। গত মাসে এক অভ্যন্তরীণ তদন্তে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
সূত্র জানিয়েছে, বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগুচ্ছে সদর দফতর। তাই বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
পুলিশের পোশাক পরা অবস্থায় টিকটক লাইকির মতো অ্যাপ ব্যবহার করে ভিডিও কনটেন্ট বানানো ও শেয়ার করার ক্ষেত্রে গত বছরই সতর্ক করে বার্তা দিয়েছিল সদর দফতর। কিন্তু এসব অমান্য করায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালীন ৪ জনসহ সারাদেশের ১৩ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ৬ অক্টোবর চিঠিও পাঠানো হয়েছে স্ব-স্ব জেলায়।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে, পুলিশের বেশকিছু সদস্যের আপলোড করা ভিডিও নিয়ে তদন্তে নামে ডিএমপির প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড এন্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন। তারা তদন্ত করে পিরোজপুর, পিটিসি টাঙ্গাইল, রংপুর, হবিগঞ্জ, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলা পুলিশে কর্মরত থাকাকালীন মোট ১৩ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়।
এই সদস্যরা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিধান করে টিকটক করে তা আপলোড করে। এর ফলে অনেকেই ভিডিও কনটেন্টগুলোতে নেতিবাচক মন্তব্য করে। যার ফলে বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়। এই ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ৮ জনই নারী সদস্য। এটিই শঙ্কার কারণ। তাই এই বিভাগীয় শাস্তির কারণে অন্যরা নিরুৎসাহিত হবে বলে বিষয়টি ইতিবাচক বলছেন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ইস্যু করা ওই চিঠিটি পিরোজপুর, টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, মাগুরা ও ঝালকাঠি পুলিশ সুপার এবং রংপুর ও টাঙ্গাইলের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ও আরআরএফ চট্টগ্রামের কমান্ড্যান্ট বরাবরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে টিকটকে আপলোড করা ভিডিও সংক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন জেলা/ ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা ইউনিফর্ম ব্যবহার করে আপত্তিকর, দৃষ্টিকটু, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার মতো অঙ্গভঙ্গি করে ভিডিও ধারণপূর্বক তা টিকটকে আপলোড করে। উক্ত ভিডিও কনটেন্টগুলোতে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য দেখা যায়। তাই ১৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৩ জনের মধ্যে একজন নায়েক। এই নারী সদস্য হবিগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত। অন্যরা কনস্টেবল। তবে এরমধ্যে চট্টগ্রাম আরআরএফের চার এবং ঝালকাঠি জেলা পুলিশের এক কনস্টেবল পুরুষ। অন্যান্য জেলা এবং ইউনিটের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তারা নারী।
অভিযুক্তরা হলেন— আইরিন আক্তার (পিরোজপুর), আয়েশা বেগম (টাঙ্গাইল), সমাপ্তি ইসলাম (পিটিসি, রংপুর), আবু হানিফা নিপু (হবিগঞ্জ), রিপন চাকমা (আরআরএফ, চট্টগ্রাম), রিমন বড়ুয়া (আরআরএফ, চট্টগ্রাম), মো. রায়হান উদ্দিন (আরআরএফ, চট্টগ্রাম), কামরুন্নাহার আক্তার (নোয়াখালী), সাকিরা আক্তার (হবিগঞ্জ), শাহানা পারভীন শম্পা (মাগুরা), মোছা. রশনি ইয়ারা (পিটিসি, টাঙ্গাইল), রেজাউল করিম (আরআরএফ, চট্টগ্রাম) ও মো. আশিকুল হক (ঝালকাঠি)।
জানা গেছে, বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে ১৩ সদস্যের র্যাঙ্ক কমানো, বেতন কর্তন, কল্যাণ তহবিলের টাকা কর্তন, বদলি ও চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন শাস্তি হতে পারে।
জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশের স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার নীতিমালা রয়েছে। সেখানে বলা আছে— পুলিশ সদস্যরা কী কী করতে পারবেন এবং কী কী পারবনে না। বিধিনিষেধের মধ্যে যারা ইউনিফর্ম পরে টিকটক করবে তারা শাস্তির আওতায় আসবে।