জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর মো.রহুল আমিন এই আদেশ দিয়েছেন।
তবে পার পাননি মামলার আরেক আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ার। আদালত এই আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারেও একই দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন। সেই সময়ে সরকারি জমি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ২০০৭ সালের ২২শে নভেম্বর চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় এ মামলা দায়ের করেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ছাড়াও ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ার ও তার ভাই হোটেল গোল্ডেন ইন লিমিডেটের পরিচালক ফখরুল আনোয়ারকে এ মামলার আসামি করা হয়।
জরুরি অবস্থা শেষে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফকে ওই দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্টের সেই আদেশ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে টিকেনি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল আজ (বৃহস্পতিবার)।
এ বিষয়ে দুদকের কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু গণমাধ্যমকে জানান, তিন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬, ১৬১ ও ১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই দাখিল করা অভিযোগপত্রে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ১৬১ ধারা অর্থাৎ টাকা লেনদেনের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়।
লাবলু জানান, আসামিদের মধ্যে রফিকুল আনোয়ার মারা গেছেন। ফখরুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বিষয়টি উল্লেখ করে এই মামলায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে শুনানিতে যুক্তি তুলে ধরলে আদালত সেটি গ্রহণ করেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আবদুল্লাহ আল বেলাল।
অভিযোগ গঠনের শুনানিতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় কার পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ করা একটি জায়গা তিন তারকা হোটেল গোল্ডেন ইন নির্মাণের জন্য ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করেন। ১ দশমিক ৪৪ বিঘা আয়তনের ওই জমির মূল্য ধরা হয় এক কোটি ৬৯ লাখ ২০৭ টাকা। পরে ‘লিজের শর্ত ভেঙে’ মেসার্স সানমার হোটেল লিমিটেডের নামে ওই জমির ইজারা নিবন্ধন করা হয়।
এক্ষেত্রে দলিলে উল্লেখ করা দরের চেয়ে সানমার হোটেলের কাছ থেকে ২ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮ টাকা বেশি আদায় করা হয় বলে দুদকের এজাহারে বলা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ মামলাটি বাতিলের আবেদন করলে ২০০৮ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করে। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চ মামলাটি বাতিল করে দেয়। পরে এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে দুদক। সেই লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিলের আদেশ দেন।
২০১৬ সালের ৮ মে আপিল বিভাগের আদেশে বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে আসে। ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন মন্ত্রী মোশাররফ।
জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম