মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারে একটি হত্যা মামলায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে ভার্চুয়ালি প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বর্ণিত মামলায় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান করেন মামলায় আসামীর জবানবন্দী গ্রহণ করা বিচারক নিশাদুজ্জামান, যিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) পদে কর্মরত আছেন।
কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন ২০২০ সালের আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত ১১ নম্বর আইনের বিধান মতে রোববার (১২ নভেম্বর) তাঁর আদালতে ভার্চুয়ালি এ সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
একই আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস. এম আব্বাস উদ্দিন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মধ্যম রাজারছড়ার আবদুল গফুর ও মৃত নারগিসের পুত্র মোঃ রুবলে (২৪) তার স্ত্রী, একই এলাকার বদিউল আলমের কন্যা রোকেয়া আক্তার (২২) কে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহত রোকেয়া আক্তারের বড় ভাই মো: আয়াছ বাদী হয়ে মোঃ রুবেলকে আসামী করে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৫৩, তারিখ : ২৯/১০/২০১৬ ইংরেজি, যার জিআর মামলা নম্বর : ৫৯৬/২০১৬ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৩১৩/২০১৭ ইংরেজি।
এ মামলার একমাত্র আসামী মোঃ রুবেল ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর দোষ স্বীকার করে কক্সবাজারের তৎকালীন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাদুজ্জামানের কাছে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রোববার মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। মামলার আসামী মোঃ রুবেল এর ২০১৬ সালে জবানবন্দী গ্রহণ করা বিচারক নিশাদুজ্জামান বর্তমানে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) পদে কর্মরত আছেন। বিচারক নিশাদুজ্জামান সুনামগঞ্জে তাঁর খাসকামরা থেকে রোববার সকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম চলাকালে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বর্ণিত মামলায় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে একই আদালতের এপিপি দীলিপ কুমার ধর অনলাইনে সুনামগঞ্জের এসিজেএম নিশাদুজ্জামান এর জবানবন্দী নেন এবং সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন আইনানুযায়ী তাঁর সাক্ষ্য রেকর্ড করেন।
এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না ও অ্যাডভোকেট নুরুস সোলতান ভার্চুয়ালি কক্সবাজার থেকে যুক্ত হয়ে সাক্ষ্য প্রদানকারী সুনামগঞ্জের এসিজেএম নিশাদুজ্জামানকে জেরা করেন।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস. এম. আববাস উদ্দিন জানান, সুনামগঞ্জ থেকে এসিজেএম নিশাদুজ্জামান ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান ছিলো-কক্সবাজার জেলা জজশীপে সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালী সাক্ষ্য গ্রহণ। এ সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা জজশীপ সাক্ষ্য গ্রহণে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করলো।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, অনলাইনে সর্বপ্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ কক্সবাজার জেলা জজশীপের জন্য একটা রেকর্ড। এটা একদিকে বিচারকার্যে কক্সবাজার জজশীপের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অপরদিকে, জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের বিচার প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করবে বলে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়টিকে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল স্মার্ট যুগের স্মার্ট কাজ হিসাবে উল্লেখ করে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, অনলাইনে সাক্ষ্য গ্রহণ কক্সবাজার বিচার বিভাগকে সমৃদ্ধ করবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি বিচারপ্রার্থীদের আস্থা ও বিশ্বাস নিঃসন্দেহে আরো বৃদ্ধি পাবে।