মুন্সীগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মো: মিজানুর রহমান নামে যে স্টাফ মারা গেছে সে ০২/০৯/২৪ তারিখ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের ভারপ্রাপ্ত কোর্টের স্টাফ। ০২/০৯/২০২৪ তারিখ ঐ স্টাফ ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলামের কাছেই আসেনি (ভারপ্রাপ্ত কোর্ট হলে যা হয়)।
০৩/০৯/২৪ তারিখ উক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের খাসকামরায় আসলে তিনি তাকে এজলাসে নিরাপত্তার জন্য দরজার পাশে থাকার ডিউটি দেন। ডিউটি করতে অপারগতা প্রকাশ করে স্টাফ মীজান বলেন তার কোমরে ব্যথা। ম্যাজিস্ট্রেট তখন তাকে বসে ডিউটি করতে বলেন। বিকাল ৫:৩০ টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম ডর্মে চলে যান ও স্টাফরাও যে যার মতো চলে যায়। কোনো মৌখিক বা লিখিত ছুটি না চেয়েই মিজানও বাসায় চলে যায়।
মিজানের বাসা অনেক দূরে মেঘনা নদী পার হয়ে গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের চর কালিকাপুরের চতুর্দিকে পানি বেষ্টিত একটি দ্বীপ সদৃশ স্থানে। মিজান পরেরদিন সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সকাল ৭ টার দিকে তার বাড়ির কাছেই বুকে ব্যথায় রাস্তায় পরে যান এবং হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। জানা যায় তিনি বহুদিন যাবতই হার্টের সমস্যায় ভুগছেন।
পত্রিকায় এসেছে ৭ দিন ধরে অসুস্থ কিন্তু ছুটি পাননি মিজান!
৭ দিন ধরে অসুস্থ হলে মিজান ২৮/০৮/২৪ তারিখ থেকে অসুস্থ থাকার কথা। ৩০ ও ৩১ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও সে কেনো চিকিৎসা করেনি? এরপরেও ০২/০৯/২৪ তারিখ মিজান যেহেতু ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলামের কাছে আসেনি সেহেতু ঐদিনও কি চিকিৎসা করাতে পারতো না? মুন্সীগঞ্জে বিশেষজ্ঞ সব ডাক্তারই বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর অব্দি চেম্বার করেন। তাহলে ০৩/০৯/২৪ তারিখ বিকালে বা সন্ধ্যায়ও ডাক্তার দেখাতে কি পারতো না?
যে অসুস্থতার কথা বলা হচ্ছে সে অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে এতো দূরবর্তী অঞ্চলের পানি বেষ্টিত ট্রলারে যাতায়াতের বাড়িতে কেনো গেলো?
তাছাড়া ১৬ বছর চাকুরিকালের একজন স্টাফের নিশ্চই অর্জিত ছুটি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকার কথা। মিজানতো চাইলেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থেকে পরবর্তীতে অর্জিত ছুটি ভোগ করতে পারতো। সেটা সে কেনো করলো না? আল্লাহ মো. মিজানুর রহমানকে জান্নাত নসিব করুন।
কিছু বিষয় বলতে চাইনি তারপরও আজ বলতে হয়। ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলামের বাচ্চা অসুস্থ (অটিস্টিক)। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বলে সারাদেশ থেকে টাকা তুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো আপনারা জানেন। যা জানেন না তা হলো উনাকে দেখেছি সেন্ডেলের সোল ছিড়ে যাওয়ায় মুচির দোকান থেকে সোল কিনে সেলাই করে পড়তে, দেখেছি প্যান্টের বেল্টের রেক্সিন উঠে সাদা হয়ে গেছে তাও একটা বেল্ট কিনতে পারেননি।
দেখেছি বহু বছরের পুরোনো রঙ উঠে যাওয়া প্যান্ট পরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষের মতো হাসছেন। ছেলের চিকিৎসা খরচ যোগাতে বিসর্জন দিয়েছেন সাধ-আহ্লাদ। তার ভয়ে কোনো স্টাফ/পেশকার অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিতে পারতো না পক্ষ থেকে। বহুবার ছদ্মবেশে ধরেছেন অবৈধ লেনদেন। তার এই সততাই কি তার জন্য কাল হলো?
লেখক: ইফতি হাসান ইমরান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মুন্সীগঞ্জ।