নিয়ামুল হক: মৌলভীবাজারে আইন শৃঙ্কলা বিঘ্ন করার অপরাধে ৬ জন আইনজীবী সহকারীর বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মৌলভীবাজার এর বেঞ্চ-সহকারী বিকাশ চন্দ্র দত্ত (বিকাশ চন্দ্র দত্ত) বাদী হয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন- (১) রণজিত কুমার নাগ, ২। যশোবন্ত ভট্টাচার্য, ৩। রাখু কান্তি নাগপতা, ৪। সজল চন্দ্র দাস , ৫। মোঃ আমির খসরু , ৬। মোঃ অলিউর রহমান খালেদ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১০ সেপ্টেম্বর আদালতের বিচার কার্য শুরু হওয়ার পর এজলাসের সম্মুখে কার্ডধারী ও কার্ডবিহীন আইনজীবী সহকারীগণসহ বিচারপ্রার্থী ও তাদের সাথে আসা লোকজন এজলাস কক্ষের পশ্চিম দিকে দরজার (পূর্ব দিকের দরজা নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ ছিল) সম্মুখে জটলা পাকিয়ে দাঁড়ানোয় আদালত কক্ষে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
এতে আইনজীবীসহ বিচারাধীন মামলায় ডাক পড়া বিচারপ্রার্থীদের এজলাস কক্ষে প্রবেশে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আদালতের আসীন বিচারকের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি মাইক্রোফোনে একাধিকবার মৌখিকভাবে দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন এবং তদনুযায়ী আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোর্ট পুলিশ সদস্য কনস্টেবল সুব্রত সিংহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের একাধিকবার সরিয়ে দেন।
এতদসত্ত্বেও তারা আবারও দরজার সম্মুখে এসে জটলা পাকানোয় আনুমানিক সকাল ১১.৪৫ ঘটিকার দিকে ডাককৃত মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও পক্ষগণ উক্ত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এজলাসে ঢুকতে না পারায় বিচারক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের মধ্যে আইনজীবী সহকারী ২নং আসামি যশোবন্ত ভট্টাচার্য্য ও বিচারপ্রার্থীর সাথে আসা একজন লোককে ডেকে তাদের নাম পরিচয় জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এবং বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও দরজার সম্মুখ ভাগ হতে না সরার কারণ জানতে চাইলে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় দরজার সম্মুখের জটলা দূর করার লক্ষ্যে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে সাময়িকভাবে এজলাস কক্ষের আসামির ডকে আটকে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ণিত পুলিশকে মৌখিক নির্দেশ প্রদান করেন।
তদনুযায়ী উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে আসামির ডকে রাখা হয়। পরবর্তীতে আইনজীবী সহকারী ২নং আসামি যশোবন্ত ভট্টাচার্যের পক্ষে কতেক আইনজীবী ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক আদালতকে উক্ত আসামিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রকাশ্য আদালতে মৌখিকভাবে আবেদন করলে আদালত তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কিছুক্ষণ পর আটককৃত উভয় ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এরপর আরো দু-তিনটি মামলা শুনানির পর স্বাভাবিক বিচার কার্য চলাকালেই আকস্মিকভাবে আইনজীবী সহকারী ১নং আসামি রণজিত কুমার নাগের নেতৃত্বে ৩নং আসামি রাখু কাস্তি নাগ, ৪নং আসামি সজল চন্দ্র দাস, ৫নং আসামি মোঃ আমির খসরু ও ৬নং আসামি অলিউর রহমান খালেদসহ অজ্ঞাতনামা আনুমানিক আরো ৫/৬ জন আসামি একে অপরের সহায়তায় অভিন্ন অভিপ্রায়ে বেআইনী জনতাবদ্ধে শক্তির মহড়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক ত্রাস সৃষ্টি করে অবৈধভাবে এজলাশ কক্ষে অনুপ্রবেশ করে বিচারকের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে উচ্চস্বরে অপমানসূচক বক্তব্য প্রদান করতে থাকে।
তখন আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বর্ণিত পুলিশ তাদেরকে বের করে দিতে চাইলে তার সরকারী কাজে স্বেচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিয়ে ১নং আসামি রণজিত কুমার নাগ হাত উঁচিয়ে চরম হট্টগোল সৃষ্টি করে তার দাপট প্রদর্শন করতে থাকে এবং তার দেখাদেখি সকল আসামি একযোগে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে বিশৃংখল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
একপর্যায়ে তারা ২নং আসামির আইনসঙ্গত আটকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিরোধ সৃষ্টি করার নিমিত্ত উক্ত আসামিকে ডক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাকে তার আটকাবস্থা হতে বেআইনীভাবে উদ্ধার করে এজলাসের দরজার বাইরে নিয়ে চলে যায়।
তখন আদালতের এজলাস কক্ষে উপস্থিত আইনজীবী নজরুল ইসলাম, বকশী জোবায়ের আহমেদ, জাবেদ আহমেদ গৌছ, কৌশিক দেসহ অন্যান্য আইনজীবীগণ উক্ত আসামিদের কাছ থেকে আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের সহায়তায় আইনজীবী সহকারী ২নং আসামি যশোবস্তকে কেড়ে নিয়ে পুনরায় আসামির ডকে নিয়ে আসেন।
উক্ত আক্রোশে ১নং আসামি রণজিত কুমার নাগ ও তার নেতৃত্বাধীন অপরাপর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে উক্ত ৩ জন আইনজীবীসহ ইতঃমধ্যে এজলাস কক্ষের দরজায় জড়ো হওয়া অন্যান্য বিজ্ঞ আইনজীবী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সাথে সরাসরি ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হন এবং অশ্লীল ও অপমানসূচক ভাষায় আইনজীবী ও বিচারকদের উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকে।
পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বিজ্ঞ আইনজীবীগণ পুলিশের সহায়তায় উক্ত সঙ্ঘবদ্ধ আসামিদের এজলাশ কক্ষ হতে বের করে দিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন সঙ্ঘবদ্ধ উক্ত আসামিরা এজলাশ কক্ষের দরজায় সজোরে থাবা, ধাক্কা ও লাথি মারা শুরু করে এবং দরজা ভেঙ্গে আদালতের এজলাশ কক্ষে পুনরায় জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করে।
যার ফলে বিকট শব্দের সৃষ্টি হয় এবং তাদের উক্তরূপ উশৃংখল আচরণে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয়। এবং আদালতের বিচার কর্মকান্ডে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় আদালতে আসীন বিচারক সাময়িক সময়ের জন্য তার আসন ত্যাগ করেন।
এরপর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে মিছিল সহকারে আইনজীবীগণ ও বিচারকগণের বিরুদ্ধে উচ্চস্বরে শ্লোগান দিয়ে দিয়ে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে আদালত ভবন ত্যাগ করে।
আসামীদের এই সক্রান্ত বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্ন অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ এর ৪/৫ এবং The Penal Code, 1860- ৩৪/১৪৭/১৮৬/৪৪৮/২২৫/২২৫ (বি)/২২৮/৩৫৩/১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার থানার মামলা নং- ১২ ও জিআর মামলা নং-২৫৬।