ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের ফলে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে যেসব বাংলাদেশি ভারতে প্রবেশ করেছেন তাদের নাগরিকত্ব বহাল থাকবে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অন্যান্য সদস্যরা হলেন—বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এমএন সুন্দরেশ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রা।
বেঞ্চের চার সদস্যই এই আইন বহাল রাখার পক্ষে রায় দেন। বিরোধিতা করেন কেবল বিচারপতি পারদিওয়ালা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার আসাম অ্যাকর্ডের ‘নাগরিকত্ব আইন-১৯৮৫’ এর ধারা ৬ এ—এর পক্ষে এই রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছিল। দীর্ঘ শুনানি শেষে এই রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
আসামে ১৯৮৫ সালে ১৯৯৬-১৯৭১ সালের যেসব বাংলাদেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে পাশ করা হয় ‘সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট’। সম্প্রতি ভারতের সংশোধিত নাগরিক আইনের (সিএএ) আওতায় সেই আইনের ধারা ৬ এ—কে চ্যালেঞ্জ করা হয় উচ্চ আদালতে। সেই চ্যালেঞ্জের রায়েই এই নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘আদালতের সিদ্ধান্তের অর্থ হলো এই যে, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আসা অনাবাসী ভারতীয়রা নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য। যারা এর অধীনে নাগরিকত্ব পেয়েছেন তারা তাদের নাগরিকত্ব বজায় রাখবেন।
আরও পড়ুন: শিশু পর্নোগ্রাফি দেখা বা ফোনে রাখাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের আগমন আসামের জনসংখ্যার ভারসাম্যকে প্রভাবিত করেছে এবং নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬ এ—রাজ্যের আদি বাসিন্দাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে—উল্লেখ করে দায়ের করা এক পিটিশনের জবাবে আদালত এই রায় দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬এ কার্যকর করা মূলত—আসাম যে ‘এক অনন্য সমস্যার’ মুখোমুখি হয়েছিল তার একটি ‘রাজনৈতিক সমাধান’ ছিল। কারণ, উদ্বাস্তুদের আগমন আসামের সংস্কৃতি এবং জনসংখ্যার ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলেছিল।
রায়ে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে এই আইনটিকে অন্যান্য অঞ্চলেও প্রয়োগ করতে পারত। কিন্তু এটি আসামে ক্ষেত্রে ‘অনন্য’ বলে তা করা হয়নি। অভিবাসীদের সংখ্যা এবং সংস্কৃতি ইত্যাদির ওপর তাদের প্রভাব আসামের ক্ষেত্রে বেশি।
এ ছাড়া, আসামে আসা ৪০ লাখ অভিবাসীর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ৫৭ লাখের প্রভাবের চেয়ে বেশি। কারণ আসামে জমির পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্যাপক উদ্বাস্তু আগমনের প্রতিক্রিয়ায় আসাম আন্দোলনের প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মানবিক ব্যবস্থা হিসেবে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে আসা অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য নাগরিকত্ব আইনে ধারা ৬এ যুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয়নি।
রায়ে আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুক্তি ঠিক আছে যে—আসামে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন অঞ্চলটির সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে এবং অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সরকারের দায়িত্ব।
তবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখকে চূড়ান্ত সীমা ধরে নিয়ে ধারা ৬এ নাগরিকত্ব আইনে অতিরিক্ত সংযোজন নয়।
শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আসাদের নাগরিকত্ব দেওয়া যেতে পারে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের এর পরে প্রবেশকারী অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে না।