ব্যাংকের কোটি টাকা শোধে মোস্তফা গ্রুপের পরিচালকদের জামিন
চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত (ছবি: সংগৃহীত)

খেলাপি ঋণ পরিশোধে বাধ্য করা সফল বিচারককে বদলি

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ মুহাম্মদ মুজাহিদুর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বদলি করা হয়েছে। তবে তাকে কোনো নির্দিষ্ট পদ দেওয়া হয়নি।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ১০৩ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারককে বদলির আদেশ দেওয়া হয়।

ঋণ খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা, পলাতক ঋণ খেলাপিদের দেশে ফিরিয়ে আনা, বন্ধক রাখা সম্পত্তির জন্য তত্ত্বাবধায়ক (রিসিভার) নিয়োগ এবং ঋণ খেলাপিদের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো বেশ কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আলোচিত হয়েছেন মুজাহিদুর রহমান।

গত চার বছরে এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম, আরামিট গ্রুপের সাইফুজ্জামান চৌধুরী, হাবিব গ্রুপ-মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স-রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মূল প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজের আশিকুর রহমান লস্করসহ অন্যান্য বড় ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ফরমান ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন বিভিন্ন মামলায় জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা বিচারক মুজাহিদুর রহমানের এই বদলির ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সিনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ, সম্পত্তি জব্দ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, পাসপোর্ট জব্দ এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে গত কয়েক বছরে ঋণ আদায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে এসব উদ্যোগ অনেক ঋণ খেলাপিকে ক্ষুব্ধ করেছে।’

আরও পড়ুনঅধস্তন আদালতের ১৮৩ বিচারক বদলি, ৭৯ জনের পদোন্নতি

‘তাকে (মুজাহিদুরকে) বদলি না করে আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এখন মানুষ মনে করতে পারে, কোনো অনিয়মের কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে। অথচ তিনি আগের সরকারের আমলে ঋণ আদায়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন,’ যোগ করেন তিনি।

আদালত সূত্র জানায়, গত চার বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে এবং অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বন্ধক সম্পত্তির মালিকানা ব্যাংকের কাছে এসেছে।

আদালতের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধ করেছে। এসএ গ্রুপ ৪৪০ কোটি টাকা, মোস্তফা গ্রুপ ২৯৫ কোটি টাকা এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ১১৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এর বাইরে, কেডিএস গ্রুপের এক পরিচালক ১০৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন।

২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। সিটি ব্যাংকের দায়ের করা এক মামলার ভিত্তিতে হিলসভিউ এন্টারপ্রাইজের ‘ফোরাম সেন্ট্রাল বিল্ডিং’ নামে বন্ধক রাখা বাণিজ্যিক সম্পত্তির জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হয়। এর ফলে, প্রতিষ্ঠানটি ২৩ কোটি টাকার বেশি ঋণ পরিশোধ করে।

২০২৩ সালে ‘মহল মার্কেট’র বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিয়ে একটি সমঝোতা করেন আদালত, যার মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে ৫১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে মহল মার্কেট।

আদালতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণে বিচারক মুজাহিদুর রহমানের কঠোর অবস্থান অনেক ঋণ খেলাপিকে দেনা পরিশোধে বাধ্য করেছে। তার এমন আকস্মিক বদলি অন্যান্য বিচারকদের মনোবল দুর্বল করে দিতে পারে এবং সামগ্রিক ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।