বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদনের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান উক্ত আবেদন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রেরণ করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ দূর করতে এবং একটি দূর্নীতি মুক্ত দেশ গঠনের জন্য তরুণ প্রজন্মের তথা ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনগণ ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যূথানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুরোধে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের অনুমোদনক্রমে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত রয়েছে। তাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইনি বৈধতা রয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়নে বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছিল । এই কমিশনগুলো থেকে যেসব রিপোর্ট পাওয়া গেছে তার অধিকাংশই হলো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। অর্থাৎ এসব শাসনতান্ত্রিক সংস্কার করতে হলে দেশের সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান সংবিধান বজায় রেখে দেশের সংস্কার করা সম্ভব নয়।
১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান কোন মৌলিক সংবিধান নয়। এটা মূলত ভারতীয় সংবিধান ও কিছু আন্তর্জাতিক কনভেনশন থেকে বিভিন্ন বিষয় কপি করে জোড়াতালি দিয়ে একটি সংবিধান লেখা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের সাথে সুস্পষ্ট বেইমানী করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায্যভাবে বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব। বিষয়টি একটু পরিষ্কার করা যাক। সংবিধান সংশোধন করতে গেলে সংসদ প্রয়োজন হবে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অর্ডিন্যান্স জারি করে সংবিধান সংশোধন করলে পরবর্তীতে সুপ্রীম কোর্ট সেটাকে Ultra Vires ঘোষণা করে বাতিল করে দিবে। এক্ষেত্রে যেটা করতে হবে তা হলো নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা। মুলত অভ্যুত্থান বা গণবিপ্লবের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্র ব্যাবস্থা গড়ে উঠে। ১৯৭১ সালেও বাংলাদেশে পাকিস্তান সংবিধান কার্যকর ছিল কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ গণবিদ্রোহ করে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করেছে এবং নতুন শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
সুতরাং, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে একটি নতুন সংবিধান প্রস্তুত ও প্রণয়ন করতে হবে। এই নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠনের দাবি উঠলেও বাংলাদেশের বিদ্যমান অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই। মূলত পরাজিত আওয়ামী লীগের সাথে দেশের বিদ্যমান অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর কোন পার্থক্য নেই। তারা মূদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তারা ক্ষমতায় গিয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দূর্নীতির স্বপ্ন দেখে। এক্ষেত্রে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন না করে বিদায় নেয়, তাহলে ইতিহাস কখনোই তাদের ক্ষমা করবে না।
যাই হোক একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সহজ ও কৌশলী পন্থা অনুসরণ করতে পারে। বিষয়টি একটু সহজভাবে ব্যাখা করা যাক। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাবেক সংবিধান সংস্কার কমিটিকে দায়িত্ব দিবে একটি নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য। এই নতুন সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছে তা পেশ করবে জণগণের মতামত নেওয়ার জন্য। অতঃপর সংবিধানের খসড়া চূড়ান্ত হলে সরকার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে অথবা সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে একটি “জুলাই ঘোষণাপত্র” বা “July Declaration” ঘোষণা করবে যেখানে জনআকাংখার বিভিন্ন অনুচ্ছেদের পাশাপাশি নতুন সংবিধানের কথা উল্লেখ থাকবে।
অতঃপর অন্তবর্তীকালীন সরকার “খসড়া সংবিধান” চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গণভোটের আয়োজন করবে। তখন বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটে নতুন সংবিধানের প্রতি তাদের সিদ্ধান্ত দিবে। বাংলাদেশের নতুন সংবিধান যদি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন হয় তাহলে ভবিষ্যতে সুপ্রীম কোর্টের পক্ষে সংবিধান বাতিল করা সম্ভব হবে না। তার কারণ হলো, গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদন হলে সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী তা “Doctrine of Political Questions” হিসেবে বিবেচিত হবে। আর Doctrine of Political Questions এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোন দেশের সুপ্রীম কোর্টই সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না।
মূলত বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্তত চার মাস আগে এই গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে করে, একদিকে নতুন সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে দেশের আপামর জনসাধারণ দেশের সর্বোচ্চ আইন তথা সংবিধান অনুমোদনে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পাবে ।
অতএব রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, বাংলাদেশের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাধিত করবেন।