রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মসনদে গেলে দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে না। সে জন্য বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে তাদের শঙ্কা, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের হাতে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীভূত না হলে ভবিষ্যতেও হীন স্বার্থে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠানো হয়।
গত বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও গবেষণার পর কমিশনগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। এসব কমিশনের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নের নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
আরও পড়ুন : জমি, জজ আর জট- বিচার ব্যবস্থায় নীরব দুর্যোগ!
তবে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবে থাকা অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক সচিবালয় করার প্রস্তাবটি অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তা আবারও দলীয়করণের দিকে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীন বিচার বিভাগের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ও প্রধান অনুষঙ্গ হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ। বিগত দিনে বিচার বিভাগকে কীভাবে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ন্যায়বিচারকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে, তার নজির আমরা সবাই লক্ষ করেছি।’
জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন বিচার বিভাগের বিষয়ে ১৯৯৯ সালে মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার আংশিক বাস্তবায়ন হয়। এরপর আর কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাইনি। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার মসনদে গেলে দলীয় স্বার্থের কথা ভেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা আর চিন্তা করে না। এ জন্য বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল এক সুবর্ণ সুযোগ বলে আমরা মনে করি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ আমল থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হলেও মাঝখানে পাকিস্তান আমল ও পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও কোনো সরকারই তা বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
প্রধান বিচারপতি কর্তৃক বিচার বিভাগ সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাবসহ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে বিবৃতিতে সংস্কার কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে।