বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিগত ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি. রোজ শনিবার সকাল ১০:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দসহ দেশের জেলা আদালতসমূহে কর্মরত বিচারকদের উদ্দেশ্যে অভিভাষণ প্রদানকালে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ (Roadmap) ঘোষণা করেন।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত উক্ত রোডম্যাপে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণ এর বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। তিনি অভিভাষণে ঘোষণা করেন যে সুপ্রীম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের জন্য তিনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুপ্রীম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গত ২৭.১০.২০২৪ খ্রি. তারিখে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
উক্ত পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইন ও বিচার বিভাগকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করা হয়।
ইতোমধ্যে অন্তবর্তীকালী সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুতকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে সুপ্রীম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনকে আরও অর্থবহ করতে প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সদয় নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক ইতোপূর্বে প্রেরিত ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়নপূর্বক এর নাম পরিবর্তনক্রমে ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : দেওয়ানি ও ফৌজাদারি বিচার ব্যবস্থা সংস্কারে আইন মন্ত্রণালয়ে সুপ্রীম কোর্টের চিঠি
‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়ায় সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলী হিসেবে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো (Organogram) এবং ইকুইপমেন্ট (Equipment) নির্ধারণ; বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদ সৃজন, বিলোপ, বিন্যাস, নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, ছুটি, চাকুরির শর্তাবলী নির্ধারণ; অধস্তন আদালত, তৎসংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা প্রতিষ্ঠান, কমিশন, ইনস্টিটিউট, একাডেমি প্রভৃতির কাঠামো (Organogram) এবং ইকুইপমেন্ট (Equipment) নির্ধারণ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া, বর্তমান খসড়ায় সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলী বন্টন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে প্রয়োজনীয় বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’এর খসড়ায় সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের বাজেটে বিচার কর্ম-বিভাগে নিযুক্ত সকলের বেতন-ভাতাদির পাশাপাশি দেশের বিচার প্রশাসন পরিচালনার প্রশাসনিক ব্যয়, অধস্তন আদালত, তৎসংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কমিশন, ইনস্টিটিউট, একাডেমি প্রভৃতির উন্নয়ন ব্যয়, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করার বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
এছাড়া, খসড়া অধ্যাদেশে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়কে অধস্তন আদালত, তৎসংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কমিশন, ইনস্টিটিউট, একাডেমি প্রভৃতির উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বা পূর্বানুমোদনক্রমে প্রয়োজনীয় আদেশ, নির্দেশ, পরিপত্র, নীতিমালা প্রভৃতি সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারবে মর্মে খসড়া অধ্যাদেশে বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক পত্রে সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ধারণাপত্র, ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া, Rules of Business 1996 – এর যে সকল স্থানে সংশোধন করতে হবে তার তালিকা, Allocation of Business – এর সংশোধনের তালিকা, সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অর্গানোগ্রাম (Organogram)- এর খসড়া সংযুক্তি সহকারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এর নিকট প্রেরণ করা হয়।