কুমিল্লায় চার আইনজীবী কারাগারে, দুইজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

কুমিল্লায় চার আইনজীবী কারাগারে, দুইজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

কুমিল্লা নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার মামলায় ২৪ জন আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জামিন পেয়েছেন বাকি ২০ জন।

কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহবুবুর রহমান সোমবার (২১ এপ্রিল) এই আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো চারজনের মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (লিটন), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞা, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম রয়েছেন।

এছাড়া অনুপস্থিত থাকা দুই আইনজীবী জিয়াউল হাসান ও মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এদিকে, আদালতে আসামিদের প্রিজনভ্যানে ওঠানোর সময় ডিম নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় বারের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটনের মাথায় ডিম পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় তাদের প্রিজনভ্যানে উঠিয়ে তড়িঘড়ি করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন ও আব্দুল মোমেন ফেরদৌসসহ চার জন। আর বাদী পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেলা পিপি কায়মুল হক রিংকু, বদিউল আলম সুজনসহ আনুমানিক ৩০ জন আইনজীবী।

মামলাটির প্রেক্ষাপট গত বছরের ৩ আগস্ট। কুমিল্লা নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্র-জনতার অনেকে আহত হন।

এ ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনকে আসামি করে ১২ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক।

মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ২৬ জন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীকেও আসামি করা হয়।

আরও পড়ুনঘুষ গ্রহণের অভিযোগে বেঞ্চ সহকারী বরখাস্ত

এ মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে ছিলেন, তবে মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২৪ জন সোমবার কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কাইমুল হক রিংকু বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেছে। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।”

জামিন নামঞ্জুর হওয়া চারজনকে আদালত পুলিশের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি হওয়া ওই মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাবেক এমপি বাহারসহ কয়েকজনের হুকুমে আসামিরা গত বছরের ৩ আগস্ট নগরের পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সড়কে আগ্নেয়াস্ত্রসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান। তাঁরা ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণসহ এলোপাতাড়ি গুলি চালান।

এতে মামলার সাক্ষীরাসহ ২৫ থেকে ৩০ জন বুক, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পিটিয়ে অনেকের হাড় ভাঙাসহ জখম করেন। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার চিৎকারে এলাকাবাসীসহ কয়েকজন সাক্ষী ঘটনাস্থলে এলে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে চাইলে আসামিরা বাধা দেন।

শুরু থেকেই মামলাটিতে আইনজীবীদের আসামি করার বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি দাবি করেন, একই ঘটনায় এর আগেও অন্তত চারটি মামলা হয়েছে। এই মামলা সম্পূর্ণ হয়রানিমূলকভাবে করা হয়েছে। তাঁরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।