বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে গুরুতর অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। যেখানে দ্রুতগতিতে সাক্ষী নেওয়া ও রায় ঘোষণা করা, জুবাইদা রহমানকে নোটিশ ইস্যু না করা এবং অভিযোগ গঠনে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সোমবার (১৪ জুলাই) প্রকাশিত ৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।
হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বিচারিক আদালতে দুই মাস চার দিনে ৪২ সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া এবং সাক্ষী শেষে আট দিনের মধ্যে রায় দেওয়ার এমন দ্রুতগতি ও সমাপ্তি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস তৈরি করে যে, বিচার নিরপেক্ষভাবে হয়নি।
এর আগে গত ২৮ মে হাইকোর্ট তারেক রহমানকে ৯ বছরের সাজা এবং জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের সাজা থেকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক বেঞ্চ এ রায় দেন।
জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করে।
মামলায় অভিযোগ ছিল, তারা সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় বেনজীরের সম্পদ ক্রোক, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান তারেক রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় তিন বছর এবং ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মোট ৯ বছরের সাজা দেন। একইসঙ্গে তিন কোটি টাকা জরিমানা করেন।
জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
পরবর্তীতে গত বছরের শেষের দিকে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে জুবাইদা রহমানের সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৬ মে দেশে ফেরেন জুবাইদা রহমান।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, বিচারক কর্তৃক এত দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণ ও রায় ঘোষণার বিষয়টি স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে। এতে জনগণের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
আদালতের এই রায়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব স্বস্তি প্রকাশ করলেও রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। মামলাটির শুরু থেকে বিচার প্রক্রিয়া ঘিরে বিতর্ক ছিল। পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর তা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।