চাকুরীর প্রাপ্যতা, অব্যাহতি, চূড়ান্ত পাওনা গ্রহণের অধিকার

চাঁদাবাজি দমনে পুলিশের নতুন উদ্যোগ: ফিরছে বিতর্কিত ডিটেনশন আইন?

বেপরোয়া চাঁদাবাজি রুখতে প্রচলিত আইনের পাশাপাশি প্রয়োজনে ডিটেনশন আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পুলিশ। আদালত-সংশ্লিষ্টদের কাছে এটি ‘কালো আইন’ হিসেবে পরিচিত। সবশেষ মডেল মেঘনা আলমকে আটকের সময় এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

পুলিশ সদরদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) চাঁদাবাজির অভিযোগের ক্ষেত্রে এই আইনে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল, পাল্টাপাল্টি হামলা, সংঘর্ষ এবং অপরাধীদের নৃশংস কর্মকাণ্ডে জনমনে ভীতি তৈরি হচ্ছে।

বিশেষ করে রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যার ঘটনা সারাদেশকে নাড়িয়ে দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ডিটেনশন আইন কী

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য সরকার যে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দিতে পারবে।

‘লজ অব বাংলাদেশ’ ওয়েবসাইটে এই আইনের প্রয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, এই আটক আদেশ বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে কার্যকর করা যেতে পারে।

আইনটির ৩(২) ধারা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন যে, কোন ব্যক্তি এই আইনের নির্দিষ্ট ধারার ক্ষতিকর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাহলে তাকে আটক রাখার আদেশ দেবেন।

যখন প্রযোজ্য হবে

বিশেষ ক্ষমতা আইনে যেসব ক্ষতিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে আটকাদেশ দেওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে–

  • দেশের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষার ক্ষতি করা, দেশের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সংরক্ষণের ক্ষতি করা,
  • দেশের নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি করা,
  • বিভিন্ন সম্প্রদায়, শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাবোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করা,
  • আইনের শাসন বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা বা উৎসাহ প্রদান বা উত্তেজিত করা।
  • ক্ষতিকর আরও কাজ হচ্ছে– জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা,
  • জনসাধারণ বা কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা আর্থিক ক্ষতি করা।

চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে প্রয়োগের ভাবনা

মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী, চাঁদাবাজদের ভয়ে ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা করতে ভয় পেলে, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। হাতেনাতে চাঁদার টাকা, রসিদ, অন্য আলামতসহ কাউকে আটক করা হলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হবে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, পুলিশের অভিযানে চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার অগ্রাধিকার পাচ্ছে। চাঁদাবাজি নিয়ে কেউ মামলা করতে ভয় পেলে পুলিশকে বাদী হয়ে মামলা করতে বলা হয়েছে। চাঁদার অর্থসহ হাতেনাতে ধরা পড়লে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হবে। প্রয়োজনে ডিটেনশন আইনের কথাও বলা হয়েছে।

আর বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রচলিত আইনের পাশাপাশি সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ডিটেনশন আইন প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। ডিটেনশনের ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তরে নেওয়া হবে। আর মহানগর এলাকায় হলে ডিটেনশন আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ডিটেনশন নিয়ে বিতর্ক কেন

এই আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছিল মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের সময়। আইনজীবীরা তখন জানিয়েছিলেন মেঘানা আলমের আগে এ আইনের সবশেষ প্রয়োগ হয়েছিল ২১ বছর আগে।

গত ১২ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মালিক বলেছিলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ দেন জেলা প্রশাসক। এটা আদালতের ব্যাপার না। যে কোনো ফৌজদারি মামলাতে গ্রেপ্তার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। পরে আদালত নির্ধারণ করেন তাঁকে কোথায় পাঠাবেন। আদালতকে বাইপাস করার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিবর্তনমূলক আইন করা হয়েছিল।

শাহদীন মালিক   আরও বলেছিলেন, এই আইনের ভিত্তিটাই হলো–আপনি ক্ষতিকর বা ভাঙচুর কিছু করতে যাচ্ছেন, তবে আপনি কিছু করেন নাই কিন্তু। সরকার যদি সন্তুষ্ট হয়, আপনি এসব খারাপ কাজ করতে উদ্যত হয়েছেন বা আপনাকে বাইরে রাখলে অপরাধগুলো হবে না, তাহলেই ডিটেনশন দিতে পারে। আর এটাতে কোনো জামিন হয় না। কারণ আদালত আপনাকে জেলে পাঠায়নি।

সুত্র : সমকাল