নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্পর্ক “সামন্তপ্রভুর অধীনে ভূমিদাসের মতো”—এই মন্তব্য করেছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন। এক বরখাস্ত জেলা বিচারকের আবেদনের রায় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও জেলা আদালতের মধ্যকার সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধার নয়, বরং তা ভয়, বশ্যতা ও মানসিক অধীনতার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে।
রায়ে তিনি বলেন, “জেলা আদালতের বিচারকরা যেন অমেরুদণ্ডী স্তন্যপায়ী প্রাণীর একমাত্র শনাক্তযোগ্য প্রজাতি। হাইকোর্টের বিচারকদের সামনে তারা এমনভাবে নিজেকে প্রকাশ করেন, যা চাটুকারিতার চেয়েও নিকৃষ্ট।”
তিনি উল্লেখ করেন, জেলা বিচারকেরা যখন হাইকোর্টের বিচারকদের স্বাগত জানাতে রেলস্টেশনে যান, তাদের থাকার এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করেন, যা আসলে “ঔপনিবেশিক অবক্ষয়” এবং “অধিকারবোধ জিইয়ে রাখার এক অনুশীলন”।
কাঠামোগত বৈষম্য ও মানসিক দাসত্বের বিশ্লেষণ
রায়ে বিচারপতি শ্রীধরন জানান, জেলা বিচারকেরা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও তাদের বসার জন্য আলাদা চেয়ার পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয় না, এবং বিরল ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও তারা বসতে ভয় পান। এটি প্রমাণ করে, কাঠামোগত বৈষম্য বিচারকদের মধ্যে এক প্রকার মানসিক দাসত্ব তৈরি করেছে।
এই পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় জামিনযোগ্য মামলা হলেও জামিন দেওয়া হয় না; এমনকি প্রমাণ না থাকলেও দণ্ড দেওয়া হয়, যাতে হাইকোর্ট অসন্তুষ্ট না হয়। বিচারপতি বলেন, “এই ভয় বিচারব্যবস্থার ভিতকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।”
জাতিভেদের ছায়া ও সামাজিক শিকড়
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, “অবচেতন স্তরে বিচারিক কাঠামোয় জাতিভেদের ছায়া স্পষ্ট। হাইকোর্টের বিচারকেরা যেন সাবর্ণ (ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-কৈবর্ত) শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন, আর জেলা বিচারকেরা যেন শূদ্র।” এই উপমা ভারতীয় সমাজের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস ও কাঠামোগত দমনপীড়নের গভীর চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
রায়ের প্রভাব
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের এই রায় শুধু একটি বরখাস্ত জেলা বিচারকের বিচারই নয়, বরং গোটা বিচারব্যবস্থার কাঠামো এবং সংস্কৃতির ওপর গভীর প্রশ্ন তুলেছে। এটি ভারতের বিচারব্যবস্থার মধ্যে প্রচলিত শ্রেণিভেদ, সম্মানহানিকর আচরণ ও ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্তমূলক মন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।