নওগাঁ জেলার মান্দা থানার চকদেবীরাম গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের সময় ধারণকৃত অশ্লীল ছবি ও ভিডিও পরবর্তীতে সামাজিকভাবে বিতর্ক তৈরি করার উদ্দেশ্যে ছড়ানোর অভিযোগে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মেহেদী হাসান তালুকদার জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা আনুমানিক দুই ঘটিকা হতে সাড়ে ৩ ঘটিকা পর্যন্ত একই থানাধীন বালুবাজার গ্রামের আসামি মোরশেদ (৩৫) এর বাড়িতে তারই সহযোগিতায় আসামি রবিউল ইসলাম ঐ মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করে এবং আসামি রবিউল ইসলাম তার মোবাইলে ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।
পরবর্তীতে আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণের শিকার মেয়েকে বিয়ে না করায় মেয়ের পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ধর্ষণের শিকার মেয়ের স্বামীকে পাঠায়। যে কারণে ঐ মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেয়।
আরও পড়ুন : নওগাঁয় অপহরণ ও হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড, দুই কিশোরকে ১০ বছর কারাদণ্ড
ধর্ষণের শিকার মেয়ে তালাকের পর পিতার বাড়িতে এসে আসামি রবিউলকে বিয়ের কথা বললে সে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।
মেয়ের পরিবার তাকে পুনরায় ঢাকার বিক্রমপুরে বিয়ে দিলে আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ধর্ষণের শিকার মেয়ের দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও পাঠায়। ধর্ষণের শিকার মেয়ের দ্বিতীয় স্বামী তাকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়ে পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার মেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে সংশ্লিষ্ট মান্দা করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়। আদালত বার জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
আজ আসামিদের উপস্থিতিতে আসামি রবিউল ইসলাম ও মোরশেদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় পড়ে শুনানো হয়।
এছাড়া অপর আসামি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে খালাস প্রদান করেন।
আসামিদ্বয়কে সাজা পরোয়ানা মূলে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার।
রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ও আতিয়ার রহমান উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।