জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়াকে আটক করার ক্ষেত্রে পুলিশ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আতিকুর রহমানের প্ররোচনা বা প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল কি না—তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, এ বিষয়ে একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডি.সি.) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া এই আদেশের অনুলিপি আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে আসে।
এর আগে বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়ার জামিন মঞ্জুর করেন একই বিচারক।
আদালতে কী বলা হয়
আসামি আহসান হাবিব ভূঁইয়ার পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী আসামির জামিনের আবেদন করে বলেন, এই আসামি জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই দাবির সমর্থনে আসামির ফেসবুক প্রোফাইল থেকে রঙিন প্রিন্ট সম্বলিত ১৬টি ফর্দ কাগজ উপস্থাপন করেন।
আসামিপক্ষে আরও আবেদন করা হয়, আসামি একজন ব্যারিস্টার এবং তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আসামির সাবেক শ্বশুর আতিকুর রহমান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার। পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে আসামির সাবেক শ্বশুর আতিকুর রহমান পুলিশকে প্রভাবিত করে তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করান। আহসান হাবীব এই এই মামলার এজাহারনামীয় আসামি নন। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আসামি জামিনে গেলে পালাবেন না। যেকোনো শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর আসামির জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
আদেশে বলা হয়েছে, পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে এই আসামির সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আসামি কথিত রাজনৈতিক সংগঠনে জড়িত থাকলে উক্ত আন্দোলনকালে ছাত্রদের পক্ষে এ ধরনের ভূমিকা পালন করা সম্ভব হতো না। শুনানিকালে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে- অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আতিকুর রহমানের প্ররোচনায় আসামিকে অত্র মামলায় অন্যায়ভাবে আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ।
এ ধরনের অভিযোগ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে আদালত মনে করেন। কোনো মামলায় এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাছাড়া নথি পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, এই আসামিকে আটকের পর সংশ্লিষ্ট গুলশান থানায় সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আসামির সঙ্গে আইনি পরামর্শের জন্য সাক্ষাতের সুযোগ পাননি, যা প্রচলিত আইনসহ সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন। কাজেই এই আসামি আটকের ক্ষেত্রে পুলিশ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আতিকুর রহমানের প্ররোচনা ও প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল কি না এ বিষয়টি একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডি.সি.) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারকে বলা হলো।
জামিন ও পরবর্তী পদক্ষেপ
সার্বিক পর্যালোচনায় আহসান হাবিব ভূঁইয়াকে ৫,০০০ টাকা বন্ডে নিয়োজিত আইনজীবী ও একজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় পুলিশ রিপোর্ট দাখিল পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করা হলো। তবে পুলিশ তাকে অন্য একটি মামলায় পুনরায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে।