চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জমির বিরোধ নিয়ে অ্যাসিড ঢেলে খেজুর কাঁটা দিয়ে দুই ভাইয়ের চোখ উপড়ে ফেলার মামলায় ২৭ বছর পর রায় ঘোষণা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত জজ আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।
আসামিদের দুইজনকে ১০ বছর এবং ছয়জনকে সাত বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন চারজন। তবে সাজাপ্রাপ্তদের দুইজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
২৭ বছর পর পাওয়া এই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্যরা। কারন দুই ভাইয়ের চোখ তুলে ফেলার ঘটনায় মামলা করায় তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানকেও হত্যা করা হয়েছিল। পরিবারের দাবি ‘যথাযথ শাস্তি হয়নি’। ২৭ বছর পর পাওয়া এই রায়ে সন্তুষ্ট নন ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্যরা। দুই ভাইয়ের চোখ তুলে ফেলার ঘটনায় মামলা করায় তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানকেও হত্যা করা হয়েছিল। ভাই ওয়াকিল আহমেদ বলেন, “২৭ বছর ধরে বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। দুই ভাইয়ের চোখ নষ্ট করার ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে বাবাকে হারাতে হয়েছে। বাবার খুনের মামলায় ১২ জনের যাবজ্জীবন হয়েছে। অথচ এই মামলায় মৃতদের সাজা দেওয়া হলো আর জীবিত এজাহারভুক্ত দুই আসামি খালাস পেল।”
দুই ভাইয়ের চোখ উপড়ানোর এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে ওয়াকিল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “ওই এক ঘটনায় পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আর কোথাও যাব না।” মামলায় ১০ বছরের সশ্রম সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- আইয়ুব আলী ও মো. ইব্রাহিম। তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের সাজা দিয়েছে আদালত। আবদুল হক ছাড়াও সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে সোলায়মান, ইউসুফ, জাফর, দুলা মিয়া ও গোলাম কাদেরের। খালাস পেয়েছেন হাসেম, সালাম, হাশেম ও জাহাঙ্গীর। মারা যাওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন রশিদ আহমদ। দণ্ডিতদের মধ্যে দুলা মিয়া ও গোলাম কাদের মারা গেছেন বলে ওয়াকিল আহমেদ জানিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে শুধু আইয়ুব আলী ও সোলায়মান কারাগারে আছেন।
মৃতদের সাজা ঘোষণা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত জেলা পিপি লোকমান হোসেন চৌধুরী জানান , তারা মারা গেছেন বলে তিনিও জেনেছেন। তবে বিষয়টি মামলার নথিতে উল্লেখ না থাকায় আদালতের নজরে আসেনি। মামলার নথি থেকে জানা যায় আসামিদের মধ্যে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত আবদুল হকের সঙ্গে জমি নিয়ে ওই পরিবারের বিরোধ চলছিল। ১৯৯১ সালের ১৭ মার্চ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরের দিকে যাওয়ার সময় আসামিরা দুই ভাই ছবুর আহমদ ও কবির আহমদকে রিকশা থেকে নামিয়ে সৈয়দনগর বারইপাড়া এলাকার খাল পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে দুই ভাইয়ের মাথায় এসিড ঢেলে দেয় এবং খেজুর কাঁটা দিয়ে তাদের চোখ উপড়ে ফেলে। এতে ছবুর ও কবির একটি করে চোখ হারান। এদের মধ্যে কবির কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। ১৯৯২ সালে মামলায় অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০০৩ সালে। মামলার বাদি সাক্ষী দিতে আসেন ২০০৩ সালে। মামলায় ২১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। তারপর শুরু হয় যুক্তিতর্ক। সাক্ষ্যগ্রহণে দীর্ঘ সময় লাগা, অনেক সময় আদালত বিচারক শূন্য থাকা এবং আসামি পলাতক থাকাসহ নানা কারণে দীর্ঘ ২৭ বছর পর এ মামলার রায় হলো।
এই মামলার চলার মধ্যে ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন মিলে ভুক্তভোগীদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানকে তুলে নিয়ে যান। উপজেলার শিশুতল পাহাড়ে নিয়ে তাকে হত্যার পর লাশ পুঁতে ফেলা হয়। এক সপ্তাহ পর সোবহানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
(চট্টগ্রাম প্রতিনিধি)