গর্ভপাত করাতে স্বামীর অনুমতি নেওয়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই। গর্ভের সন্তান রাখবেন নাকি গর্ভপাত করাবেন, সেই সিদ্ধান্ত ওই নারীই নেবেন বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ এম খালউইলকর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ এক ব্যক্তির আবেদন গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) খারিজ করে দিয়ে এই রায় দিয়েছেন।
আদালত জানিয়েছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি তাঁর গর্ভের ভ্রূণকে জন্ম দিতে না চান, তাহলে সেই সিদ্ধান্তে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় গর্ভপাত করায় তাঁর স্বামী বিষয়টি অবৈধ উল্লেখ করে স্ত্রীর বাবা, ভাই ও দুই চিকিৎসকের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছিলেন, গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নারী একাই নেবেন।
আজ সুপ্রিম কোর্টও একই রায় দিয়ে জানিয়েছেন, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি তাঁর গর্ভের ভ্রূণকে জন্ম দিতে না চান, তাহলে সেই সিদ্ধান্তে অন্য কারও হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার নেই। এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো নারীও চাইলে গর্ভের ভ্রূণের গর্ভপাত করাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর একার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৪ সালে ওই দম্পতি বিয়ে করেন। পরের বছর তাঁদের পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী ১৯৯৯ সাল থেকে তাঁর বাবার বাড়ি চণ্ডীগড়ে থাকেন। বিয়ে বিচ্ছেদের মামলা চলাকালে চণ্ডীগড়ের একটি আদালত ওই নারীকে আবার কিছুদিন স্বামীর বাড়িতে একসঙ্গে থেকে বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০০২ সাল থেকে তাঁরা একসঙ্গে থাকা শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু এতেও তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কের কোনো উন্নতি না হওয়ায় গর্ভপাত করাতে চান ওই নারী। কিন্তু এতে বাধা দেন স্বামী। পরে ওই নারীর বাবা তাঁকে স্বামীর বাড়ি থেকে চণ্ডীগড়ে নিয়ে যান। সেখানে চণ্ডীগড় হাসপাতালে তিনি গর্ভপাত করান। কিন্তু স্বামী হিসেবে হাসপাতালের কাগজপত্রে ওই ব্যক্তি কোনো সম্মতিসূচক কোনো স্বাক্ষর করেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনুমতি না নিয়েই গর্ভপাত করানোর কারণে বাবা হিসেবে যে মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছেন— এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। তিনি স্ত্রী, তাঁরা বাবা, ভাই ও চণ্ডীগড় হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের কাছে ৩০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন। তাঁর দাবি, অনাগত সন্তানের বাবাকে না জানিয়ে ও কোনো প্রয়োজন ছাড়াই গর্ভপাত ঘটানো আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ও অপরাধ। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেন। পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। আজ সুপ্রিম কোর্টও একই রায় দেন।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য একজন নারীর মানসিক প্রস্তুতি দরকার। অপ্রত্যাশিত সন্তানের জন্ম নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই গর্ভের সন্তান রাখবেন নাকি গর্ভপাত করাবেন তা অন্তঃসত্ত্বা একাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রায় দেওয়ার পাশাপাশি আদালত ওই মামলার বিবাদীদের (স্ত্রী, স্ত্রীর বাবা, ভাই ও দুই চিকিৎসককে) প্রত্যেককে ২৫ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দিতে মামলাকারী ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতীয় আইনে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ বিষয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করা হয়। এই পিটিশন দাখিল করা ব্যক্তিদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা কয়েকজন নারী রয়েছেন, যাঁরা ২০ সপ্তাহ পর গর্ভপাত করাতে চান। এ বিষয়টি আদালত সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়ে থাকেন।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম