ধর্ষণ এবং বাংলাদেশের আইনসমূহ

ইদানীং ধর্ষণের মামলা পরিচালনা করতে করতে এক প্রকার ক্লান্ত বলা যায়। এত বেড়ে গেছে এই কিছু কথা না বললেই নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক, বুদ্ধিজীবীসহ কবি সাহিত্যিকের অনেক লেখা আছে। তারপরও কেন জানি ধর্ষকদের ঠেকানো যাচ্ছেনা। তাই হতাশ হয়ে অনেক সাহিত্যিক কটাক্ষ করে বলেছেন, ধর্ষণের সময় বিষয়টাকে উপভোগ করা শ্রেয়!

একসময় হয়তো ধর্ষণ বিষয়টিই ছিলনা, সেই সময় পুরুষরা অবাধে নারীদের সাথে মিলিত হত কারণ সেই সময় আর যাই থাকুক মানুষ সভ্য ছিলনা, ধর্ষণ বিষয়টি সভ্যতার অবদান।

এইবার আইনে আসা যাক: এই পর্যন্ত চারটি ধর্ষণ বিষয়ক আইনের সন্ধান পাওয়া গেছে। Penal Code, 1860 এর Section – 375/376, Cruelty to Women Ordinance, 1983 এর Section -7/8, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ১৯৯৫ এর ধারা- ২(গ) ততসহ ধারা- ৬, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা -৯(১) এই চারটি আইনই পুরুষ কর্তৃক নারী বা শিশুকে ধর্ষণের আইন এবং তার শাস্তির বিধান। ধর্ষণ বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করেছে ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির ৩৭৫ ধারা। এইখানে ধর্ষণ বলতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে/সম্মতি ব্যতিরেকে ইত্যাদি পাঁচ ধরণের সহবাসকে ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, বিষয়টা সত্যিকার অর্থে ধর্ষণের বিচার করার জন্য যথেষ্ট ছিল এবং সাথে এমন ও একটা বিষয় সং যুক্ত করা হল যে বিবাহিত স্ত্রীর বয়স যদি ১৩ বছরের কম হয় তবে তার সাথে মিলন উক্ত নারী উপভোগ করলেও রাষ্ট্র স্বামীকে ধর্ষণের শাস্তি দিবে। এই বিধানটা সম্ভবত বাল্যবিবাহ ঠেকানোর জন্য করা হয়েছিল। এই আইনটি যদিও এখনও বহাল আছে কিন্তু এই আইনে এখন আর মামলা হয়না কেননা এর পরে আরো সময়োপযোগী আইন এসেছে।

Cruelty to Women Ordinance, 1983 এর ৭/৮ ধারায় ধর্ষণ এর কোন শাস্তির বিধান না করলেও ধর্ষণ এর সময় মৃত্যু ঘটানো বা ঘটানোর চেষ্টার শাস্তির বিধান করা হয়েছে কিন্তু ধর্ষণের কোন শাস্তির বিধান করা হয়নি কারন ধর্ষণের বিচার দন্ডবিধিতেই করা সম্ভব ছিল।এই আইন এখন আর কার্যকর নাই ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু আইন প্রণয়নের সাথে সাথে বাতিল হয়ে গেছে। এই আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা দন্ডবিধির আদলেই রেখে দেয়া হয়েছে কিন্তু ধারা – ৬ এ প্রথম বারের মত শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়।এই বিধানও ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাতিল হয়ে গেছে। তবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক দিক বেরিয়ে আসল যখন এই আইনের ধারা-৯(১) এর ব্যাখ্যা অংশটুকুর মাধ্যমে, যেখানে বলা আছে ” প্রতারণা মূলক ভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া” বিপত্তি ঘটল এখানে। আর এই লাইনটা আইনে থাকায় প্রেমিকারা এখন প্রেমিকদেরকে একেবারেই হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছেন। উপভোগ করেন একসাথে কিন্তু ব্রেক আপ হয়ে গেলে ধর্ষণ মামলা করতে বিলম্ব করেন না।

তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এত আইন করার পরও যখন ধর্ষণ ঠেকান গেলনা সেহেতু একজন আইনজীবী হিসেবে আমার পরামর্শ হল আইনটা আরও কঠিন করা দরকার একেবারে অস্ত্র আইনের মত, যেমন অস্ত্র আইনে অস্ত্র ব্যাবহার করা লাগেনা শাস্তি পাওয়ার জন্য, শুধু মাত্র নলেজ, কন্ট্রোল ও পজেশন থাকলেই হয়। ধর্ষণ ঠেকানোর জন্যও এখন আইন করা যেতে পারে পুরুষ মানুষের লিঙ্গ থাকলে হবে এবং তার সাথে লিঙ্গের উপর নলেজ, কন্ট্রোল ও পজেশন থাকলেই  শাস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট, কেননা ধর্ষণ করার যন্ত্র সাথে নিয়ে ঘুরবেন সু্যোগ পেলে ধর্ষণও করবেন কিন্তু শাস্তি ভোগ করবেন না, তা কি করে হয়?

 

লেখক: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী সদস্য।