চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন

‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’ প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক জাকির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে উদ্দেশ্য করে তার ফেসবুকে লেখেছেন ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’। ১৪ অক্টোবর (শনিবার) রাত সাড়ে ১১ টায় তিনি এই শিরোনামে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে তার প্রতি নানা অবিচারের কথা তুলে ধরেছেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বপালনের সময় আপনার অবৈধ প্রস্তাব মেনে না নেয়ার কারণে আপনি আমার প্রতি যে অবিচার করেছিলেন তা মনে আছে আপনার? আপনার অন্যায় প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ না করার কারণে আপনি আমাকে কমিশনের মৌখিক পরীক্ষায় বসতে দেননি মনে আছে আপনার? কমিশনের সদস্য হিসাবে আমার প্রাপ্য সুবিধাদি বন্ধ করে রেখেছিলেন মনে আছে আপনার? আপনার স্বেচ্ছাচারিতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সনের ১৫ জুলাই আপনাকে ও কমিশনের সকল সম্মানিত সদস্যকে দুটি পত্র দিয়েছিলাম মনে আছে আপনার? পত্রে আপনাকে কুচক্রী হিসাবে উল্লেখ করেছিলাম মনে আছে আপনার? ভুলে গিয়ে থাকলে আপনার স্মৃতিশক্তিকে সাহায্য করতে আমার কাছে রক্ষিত পত্রের কপি আবারও আপনাকে দিতে পারি। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সভা চলাকালীন বিচারপতি রিফাত আহমেদ, বিচারপতি এমদাদুল হক, ঢাকার তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ জনাব আব্দুল মজিদ সহ অন্যান্য সম্মানিত সদস্যদের উপস্থিতিতে আপনার স্বেচ্ছাচারিতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম স্মরণ আছে আপনার?

আপনাকে সেদিন বলেছিলাম লবিং করে সদস্য হইনি, কারোও প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য সদস্য হইনি, আরও বলেছিলাম আপনার মধ্যে ন্যূনতম নীতি-নৈতিকতা নেই। মনে পড়ে আপনার সে সব কথা? আমার মনে আছে বিচারপতি রিফাত আহমেদ ও বিচারপতি এমদাদুল হক আমাকে বার বার থামানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আমি না থেমে বলেই যাচ্ছিলাম আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে। কারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আপনার সাথে আর কাজ করবো না।

আমার প্রতি আপনার অবিচার আর আমার পত্র প্রদানের বিষয়ে মানবাধিার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, আইন কমিশনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম শাহ আলম পুরোপুরি অবগত ছিলেন।

এ ছাড়াও অবগত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের একজন শিক্ষক (তাঁর অনুরোধে আপাততঃ নামটি উল্লেখ করছি না) যাকে আমার পরিবর্তে কমিশনের মৌখিক পরীক্ষায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিন্তু তিনি আমার পরিবর্তে মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষক হিসাবে বসতে রাজী হন নি। ফলে ঐ বছর আইনের কোন শিক্ষক মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন নি আপনার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। আমার প্রতি আপনার নির্দয় আচরণ, অবিচার, ব্যক্তিগত হয়রানি ও সম্মানহানিকে মেনে নিয়ে চুপ ছিলাম। আপনাকে যখন অনেকেই জাতীয় বীর বানানোর অপচেষ্টা করছিলো তখন আমি কেবলই চুপিসারে হাসতাম। বোধ করি বিধাতাও হেসেছেন উর্ধবালোকে বসে।

কারোও অন্যায়-অপরাধের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করে কাউকে অসম্মানিত করা আমার অন্তর্গত বিশ্বাস ও চেতনার পরিপন্থী। তাই ভুক্তভোগী হয়েও স্পিকটি নট ছিলাম। কিন্তু এক সাগর রক্ত আর লক্ষ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ কারো অবিমৃশ্যকারিতার জন্য অস্থির হয়ে ওঠবে, ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিনষ্ট হওয়ার শংকা তৈরি হবে, কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন হুমকির মুখে পড়বে আর চুপ করে বসে থাকবো, তা হতে পারে না। লক্ষ, লক্ষ শহীদ আর সম্ভ্রমহারানো মা-বোনের কাছে আমি দায়বদ্ধ, তাই কুলুপ আঁটা মুখ খুলতেই হলো।

উল্লেখ্য ১৩ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলেইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে বিচারপতি সিনহা দেশ ত্যাগ করেন।

 

নির্বাচিত স্ট্যাটাস/লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম