২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় পড়া আজ শেষ হচ্ছে না। বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী রায় পড়ার সময় আদালতে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রায়ে এক হাজার পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
এক হাজার পৃষ্ঠারও বেশি রায় কাল সোমবারও পড়বেন বিচারকেরা। আজ রোববার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির রায় পড়া শুরু হয়। শুরুতে শওকত হোসেন রায় পড়েন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
আজ বেলা একটা পর্যন্ত রায় পড়ার পর বিরতি নেন আদালত। বেলা দুইটায় আবার রায় পড়া শুরু হয়।
এখন পর্যন্ত পড়া রায়ের পর্যবেক্ষণে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইপিআর পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী দেশে-বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্য আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এই কলঙ্কচিহ্ন তাঁদের অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।
এদিকে পিলখানা হত্যা মামলায় কয়জন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে, কয়জন আসামির যাবজ্জীবন বহাল থাকবে, কতজন খালাস পাবেন এসব দণ্ডের ব্যাপারে তিন বিচারপতিই একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পিলখানা হত্যা মামলার রায় নিয়ে আজ রবিবার বেলা দেড়টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মামলায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শুনানি হয়েছে। আজ এই মামলার রায় পড়ছেন আদালত।
মাহবুবে আলম জানান, তিন সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। নেতৃত্ব প্রদানকারী বিচারপতি মো. শওকত হোসেন প্রথমে রায় পড়া শুরু করেন। এরপর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তাঁর পর্যবেক্ষণ পড়তে শুরু করেছেন। দুপুরের পর বেঞ্চের আরেক সদস্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তাঁর পর্যবেক্ষণ পড়বেন।
এই মামলাটি পৃথিবীর ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য একটি মামলা বলে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। আসামি সংখ্যার দিক থেকে এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন।
এই মামলায় আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাঁদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতরা জেল আপিল ও আপিল করেন। আর ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০ তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম