বহুল আলোচিত পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও সাজা বাতিলের জন্য আসামি পক্ষের করা হাইকোর্টে আপিলের রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আজ রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) হাইকোর্ট বেঞ্চ আলোচিত হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করছেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
সরেজমিন দেখা যায়, সুপ্রিম কোর্টের মূল গেট, বার কাউন্সিলের পাশের গেট এবং হাইকোর্ট মাজার গেটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে হাইকোর্ট মাজার গেট পর্যন্ত সড়কেও মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের পুরুষ এবং এবং নারী সদস্য। সুপ্রিম কোর্টের মূল গেটে আর্চওয়ে গেট বসিয়ে আইনজীবী ও আসামির স্বজনদের ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। গাড়িগুলোতেও করা হচ্ছে তল্লাশি।
কোর্ট চত্বরের অ্যানেক্স ভবনের ২৪ নম্বর কোর্টে রায় ঘোষণা করা হবে। এই কোর্টের কক্ষের বাইরেও সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। আইডি কার্ড দেখে পরিচয় নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদাদ বলেন, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আদালতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহ চলাকালে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। মামলায় সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামির সংখ্যা হয় ৮৫০ জন। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (তিন বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত) কারাদণ্ড, ২৭৮ জনকে খালাস এবং ৪ জন আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় মামলার দায় থেকে তারা অব্যাহতি পায়।
রায়ে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর) এই নাম পরিবর্তন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম