তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্তির বিধান রেখে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার।
আজ বুধবার (২৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্তে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
দেশের বিভিন্ন স্থানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যবহারের কারণে এই ধারাটি ওই আইন থেকে বাদ দিয়ে তা আরও স্পষ্ট করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হবে বলে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
গত বছরের ২২ আগস্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তবে খসড়াটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, ‘যারা কনসার্ন স্টেক হোল্ডার (সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী) তাদের নিয়ে বৈঠক করে এটাকে (খসড়া আইন) আরেকটু পরিশীলিত করবেন।’
এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েক দফা সভা করার পর অবশেষে বুধবার খসড়াটি চূড়ান্ত হল।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করেছি। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর আশা করছি আগামী শীতকালীন অধিবেশনে জাতীয় সংসদে এটি উত্থাপন করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসারিত ডিজিটাল জগতকে নিরাপত্তা দেবে এবং সেটির বিকাশে সাহায্য করবে।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমাদের দেশের সংবিধানে প্রদত্ত সব ধরনের মৌলিক অধিকার এবং সংবিধানের যেসব গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি আছে, সেটার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে অন্য আইন যেভাবে করে থাকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আমরা সেভাবে তৈরি করেছি। এই আইন নাগরিকের সব মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করবে। সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল সমাজ গড়তে সাহায্য করবে, ডিজিটাল সমাজকে নিরাপত্তা দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একই আইনে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা আছে সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আপনারা পাবেন, একই সঙ্গে ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হওয়ার প্রস্তাবও যাবে।’
যে ধারাগুলো বাতিল হচ্ছে সেগুলোর বিষয়বস্তু কি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকবে- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য করা হচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগ ছিল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাসদ একাংশের সভাপতি ইনু বলেন, ‘সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িতদের উদ্বেগ এখানে ব্যাপার নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ১৬ কোটি নাগরিকের জন্য করা হচ্ছে। সুতরাং এখানে সাংবাদিক বলে আলাদা কোনো বিষয়বস্তু নেই। সম্প্রচার আইন যখন পরবর্তীতে আসবে। এতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কর্মীদের ব্যবস্থা করা হবে।’
৫৭ ধারায় যেভাবে সাজার ধরন যেমন জামিন অযোগ্য, এ বিষয়গুলো কীভাবে এসেছে- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে নতুনভাবে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের ধরন দেখে বিভিন্ন স্তরে সাজার প্রস্তাব করেছি।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে সভাটি শুরু হলেও শেষ হওয়ার আগে অন্য একটি সভায় যোগ দিতে চলে যান তিনি। তবে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস এই ৫৭ ধারা সেভাবে থাকবে না। এবং ফ্রিডম অব স্পিচ (বাক স্বাধীনতা) রক্ষা করার জন্য যে সব চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের দরকার সেগুলো আমরা মনে হয় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও সম্প্রচার আইনে থাকবে।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত হলে তা প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলেও জানান আনিসুল হক।
সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম