দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেছেন, ব্যাংক লুটপাটের বিষয় খুবই শক্তভাবে দেখা দরকার। আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো নিষ্ঠার সঙ্গে তদন্ত করা উচিত। তা না হলে ধ্বংস হয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি। এছাড়া দুদকের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ করে অভিযোগপত্র দিতে দেরি হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন আদালত।
ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় বেসিক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ফজলুস সোবহানকে জামিন-সংক্রান্ত রুলের শুনানিতে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
দুইশত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক দাবি করে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মঙ্গলবার যে বক্তব্য দিয়েছেন এজন্য তার সম্পত্তির উৎস চেয়ে দুদকের ২৬ ধারায় নোটিশ দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
জারি করা রুল নিষ্পত্তির পর বেসিক ব্যাংকের ডিএমডি ফজলুস সোবহানসহ তিনজনকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছেন আদালত। শর্তের মধ্যে রয়েছে কোর্টের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যেতে পারবে না। তাদের পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
জামিনপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেন- বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখার ম্যানেজার সিপার আহমেদ ও ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সেলিম।
চার মামলায় ফজলুস সোবহানকে এবং অপর দুই মামলায় বাকি দুই কর্মকর্তাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে বুধবার ব্যাংক কর্মকর্তাদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এবং ড. শাহদীন মালিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মামুন মাহবুব, একেএম ফজলুল হক ও কামাল আমরুহী।
পরে আইনজীবী মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ সময় নেয়ার পরও চার্জশিট না দেয়ায় বেসিক ব্যাংকের ডিএমডি ফজলুল সোবহানকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। মোট চারটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন।
আইনজীবী মামুন মাহবুব বলেন, এ জামিন আদেশে আমরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছি। এ মামলায় তদন্ত পুরোদমে চলছে। বেশ অগ্রগতিও হয়েছে। তাছাড়া বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানকেও দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অল্প দিনের মধ্যেই চার্জশিট দেয়ার কথাও আদালত জানানো হয়েছে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি-না জানতে চাইলে দুদকের এ আইনজীবী বলেন, আদেশের বিষয়ে দুদককে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। দুদকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক পৃথকভাবে অনুসন্ধান করে।
এরপর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৫৬টি মামলা করে দুদক। মামলায় বেসিক ব্যাংকের ২৬ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তার বাইরে অপর আসামিরা ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।
তবে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং ব্যাংটির পরিচালনা পর্ষদকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। বিষয়টি আদালতের নজরে আসার পর এ নিয়ে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আবদুল হাই বাচ্চুর বক্তব্য জানতে চেয়ে দুদক তাকে নোটিশ দেয়। এ নোটিশের পর আবদুল হাই বাচ্চু দুদকে হাজির হন। দুদক এরই মধ্যে তাকে দু’দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম