ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে যে জায়গায় কারাগারের বেকারি পণ্য বিক্রি হত, সেই জায়গা ফখরুদ্দিন বিরিয়ানিকে ইজারা দেওয়ায় আপত্তি তুলেছেন স্থানীয়রা।
তাদের আশঙ্কা, একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়ায় ধীরে ধীরে আরও অনেক দোকান বসবে সেখানে। পুরনো কারাগারে সবুজ উদ্যান আর খোলা মাঠ থাকবে বলে যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি কর্তৃপক্ষ মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়ায় ওই জায়গা কারা অধিদপ্তরের কাছ থেকে ইজারা পেয়েছে। সেখানে গত ১২ ডিসেম্বর তাদের নাজিমুদ্দিন রোড শাখা চালুও হয়ে গেছে।
অন্যদিকে কারাগারের জমিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা করার বিরোধিতা করে আসা স্থানীয় বাসিন্দারা এই ইজারার প্রতিবাদে গত ৯ ডিসেম্বর কারা ফটকে মানববন্ধন করেছেন।
আর কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ইজারা স্বল্প সময়ের জন্য। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কিছু নেই।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো কারাগারের প্রধান ফটকের ডানপাশে বেকারির জায়গায় ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাবের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। ভেতরে ক্রেতাদের জন্য বসানো হয়েছে চেয়ার টেবিল।
ওই বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করা হলে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির ব্যবস্থাপক শাফিন হোসেন জানান, তাদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম দেশের বাইরে আছেন।
শাফিন বলেন, “মাসে ৪০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে। তারা (কারা অধিদপ্তর) আমাদের জানিয়েছে, যখন তখন ভবন ভাঙতে পারে। প্রয়োজন হলে এক নোটিসে দোকান ছাড়া লাগতে পারে।”
ওই চুক্তি নবায়নযোগ্য কিনা- এমন প্রশ্নে শাফিন বলেন, “উনারা বলেছেন, যদি কোনো সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে নবায়ন করা যাবে। অন্যথায় চলে যেতে হবে।”
তার দাবি, স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছেন পার্ক ও অন্যান্য দাবিতে; ফখরুদ্দিন বিরিয়ানির বিরুদ্ধে নয়।
তবে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে একবার ইজারা দিলে সেখান থেকে তাদের সরানো যাবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাসিবুর রহমান মানিক। তিনি বলেন, “পুরনো কারাগারে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা চাই না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এখানে সবুজ উদ্যান হবে, খোলা মাঠ থাকবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতার জাদুঘর চাই। এখানে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আমরা চাই না।”
মানিক বলেন, “কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর তাকে আপনি কীভাবে উচ্ছেদ করবেন। তারা কোর্টে মামলা করতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের সরানো কঠিন হবে। এটা করা হলে কারাগারকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানমুক্ত রাখার যে ঘোষণা তা বাস্তবায়নের বাধা হয়ে দাঁড়াবে।”
পুরনো কারাগারের জমিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা না গড়ার অনুরোধ জানান কমিউনিটি সংগঠন ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক আজিম বকসও। তিনি বলেন, “ওই এলাকা উন্মুক্ত রাখলে পুরান ঢাকার মানুষের নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকবে। আজকে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানিকে দিল, দেখা গেল পরে তার পাশে আরেকটা দাঁড়িয়ে যাবে। পুরানো ঢাকায় এখন এটাই একমাত্র উন্মুক্ত জায়গা। এখানে যদি আবার বাণিজ্যিক স্থাপনা হয় তাহলে এর পরিবেশ আর সেরকম থাকবে না। ঢাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের যে দাবি, নিশ্বাঃস নেওয়ার যে একটা জায়গা, সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।”
স্থানীয়দের আপত্তি থাকলেও ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম বলছেন, নিয়মকানুন মেনেই স্বল্প সময়ের জন্য ফখরুদ্দিনকে দোকান ভাড়া দিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, “এখানে আগেও আমাদের একটা শোরুম ছিল। এটা তো অবৈধ কোনোভাবে দেওয়া হয় নাই। একটা প্রতিষ্ঠিত খাদ্যপণের ব্র্যান্ড, তাদেরকে বৈধভাবে নিয়মকানুন মেনেই দেওয়া হয়েছে। আমাদের জায়গা আমরা ভাড়া দিলাম সেখানে অন্য কারও প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ আছে কি?”
ডিআইজি প্রিজন বলেন, “এটা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছে, যখন এই বিল্ডিং ভাঙা পড়বে তখন তারা চলে যাবে। আর এই প্রকল্প তো চকবাজারের লোকজন বাস্তবায়ন করবে না। তাদের মাথাব্যথা কেন, মাথাব্যথা তো আমাদের। এটা আমরা বাস্তবায়ন করব। এ প্রকল্পের সবকিছু কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই হচ্ছে।”
২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়া হয়। তখন পুরোনো কারাগারের জমিতে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণে মহাপরিকল্পনা নেয় কারা অধিদপ্তর।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরাতন কারাগারে খোলা পার্ক, কৃত্রিম লেক, সুইমিং পুল, বহুতল গাড়ি পার্কিং, ওয়াচ টাওয়ার, সিনেমা হলসহ মাল্টিকমপ্লেক্স মার্কেট হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া কারাগারের ভেতরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, জাতীয় চার নেতার জাদুঘর ও হাসপাতাল ভবনসহ আরো দু’একটি স্থাপনা আগের মতই থাকবে। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম