ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দিল উপদেষ্টা পরিষদ

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দিল উপদেষ্টা পরিষদ

ব্যক্তিগত তথ্যের মালিকানা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত উপাত্ত তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে, এবং তা কেবল তাঁর সম্মতিতেই আইনসম্মতভাবে প্রক্রিয়া করা যাবে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি–বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রেস সচিব শফিকুল আলম, এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।

উপাত্ত প্রক্রিয়ায় কঠোর নিয়ম

সরকার জানিয়েছে, এই অধ্যাদেশ জারি হলে ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবহার, স্থানান্তর ও ধ্বংসের প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে আসবে, যা ডিজিটাল খাতে আস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

অধ্যাদেশের খসড়ায় ৫৭টি ধারা রাখা হয়েছে। এতে উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবহারের আগে উপাত্তধারীকে উদ্দেশ্য, সংরক্ষণকাল, স্থানান্তর এবং প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করে তাঁর সুস্পষ্ট সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

যেসব ক্ষেত্রে উপাত্তধারী শিশু বা সম্মতি দেওয়ার অক্ষম, সেখানে মা-বাবা বা আইনগত অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন হবে।

উপাত্তের শ্রেণিবিন্যাস

প্রস্তাবিত আইনে ব্যক্তিগত উপাত্তকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
১. পাবলিক বা উন্মুক্ত ব্যক্তিগত উপাত্ত
২. অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিগত উপাত্ত
৩. গোপনীয় ব্যক্তিগত উপাত্ত
৪. সীমাবদ্ধ ব্যক্তিগত উপাত্ত

এছাড়া “সংবেদনশীল ব্যক্তিগত উপাত্ত” প্রক্রিয়া করার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

উপাত্তধারীর অধিকার ও অব্যাহতি

উপাত্তধারী যেকোনো সময় তাঁর সম্মতি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে পারবেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা, কর ফাঁকি প্রতিরোধ, জনস্বাস্থ্য বা অপরাধ তদন্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রে উপাত্ত প্রক্রিয়ায় সম্মতি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

জরিমানা ও দণ্ড

অধ্যাদেশে উপাত্তধারীর অধিকার লঙ্ঘিত হলে প্রশাসনিক জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে উপাত্ত প্রক্রিয়া, বেআইনি প্রবেশ, অপব্যবহার, বা সংবেদনশীল উপাত্ত অননুমোদিতভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দণ্ড ও শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ

একই বৈঠকে ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা দেশের সব ডেটা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের তদারকি করবে।